ইসি আইন নিয়ে মাথা ঘামাতে চায় না বিএনপি

প্রকাশিত: ২:৫৭ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৯, ২০২২

ইসি আইন নিয়ে মাথা ঘামাতে চায় না বিএনপি

ইউএস বাংলা বার্তা ডেস্কঃ
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের খসড়া নির্বাচন কমিশন (ইসি) আইন নিয়ে আগ্রহ নেই বিএনপির। দলের নেতারা মনে করেন, জাতীয় সংসদ আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। এ অবস্থায় যে আইন হবে, তা নিরপেক্ষ কাউকে ইসিতে আনার জন্য হবে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েই সরকার আইন করবে। তাই এই ইস্যুতে কোনো কর্মসূচি দেওয়া বা মাথা ঘামাতে চান না বিএনপি নেতারা।


দলটির স্থায়ী কমিটি মনে করে, আওয়ামী লীগের লোকজনকে ইসিতে আনতেই সরকার হঠাৎ করে এই আইন করছে। এর মধ্য দিয়ে চাপে থাকা আওয়ামী লীগ সরকার দেশি-বিদেশি সবাইকে বিভ্রান্তিতে ফেলতে চায়। যদিও তা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, ‘ইসি পুনর্গঠনে যে খসড়া আইনের কথা বলা হয়েছে, তা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আমাদের মূল দাবি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসা ও নিরপেক্ষ সরকার। আমাদের এই দাবি সরকার সহজেই মেনে নেবে, তা আমরা মনে করি না। সে ক্ষেত্রে সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে দুর্বার
আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করা হবে। ওই সরকার ঠিক করবে কারা নির্বাচন কমিশনে আসবে।’
সম্প্রতি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখানে বড় প্রশ্ন হলো, এ আইন করবে কে? বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার? বর্তমান জাতীয় সংসদও তো তাদের নিয়ন্ত্রণে। এ পর্যন্ত যতগুলো কাজ তারা করেছে, সবকিছুই দলীয় বিবেচনাকে প্রাধান্য দিয়ে। এখন আপনারা আইনের কথা বলছেন, এ আইন যদি তারা করে, এমনভাবেই করা হবে যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যাতে নিজেদের লোক আনা যায়। এখানেও আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে প্রাধান্য দিয়েই আইন করতে হবে। সেটা অবশ্য এ সরকারের আমলে সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রেও নিরপেক্ষ সরকার দরকার হবে।’
গত সোমবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে প্রস্তাবিত আইন নিয়ে আলোচনা হয়। ওই আলোচনায় অংশ নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির নেতারা তাদের মতামত তুলে ধরেন। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সভা মনে করে, অনুগত ও অপদার্থ নির্বাচন কমিশন গঠনের চলমান প্রক্রিয়াকে দলীয় স্বার্থে আইনি রূপ দেওয়ার সরকারি অপপ্রয়াসের ফলাফল হবে- যে লাউ, সেই কদু। এবার সম্ভবত হতে যাচ্ছে একটি পচা কদু।
গতকাল গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘পচা কদু এ জন্য বলছি যে খসড়া আইনে আরেক প্রস্তাব করা হয়েছে, সরকারি চাকরির দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ছাড়া কেউ এটার সদস্য হতে পারবেন না। অর্থাৎ সিভিল সোসাইটির কেউ অথবা কোনো শিক্ষাবিদ, কোনো আইনজ্ঞ, তারা কেউ সদস্য হতে পারবেন না। দুনিয়ার কোথায় এ রকম বিধিনিষেধ আছে?’
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির শীর্ষনেতারা নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন ইস্যুতে একটি স্থায়ী সমাধান চান। প্রতি ৫ বছর অন্তর নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা ইস্যুতে রাজনৈতিক উত্তাপ দেখা দেয়। এতে করে দেখা গেছে পর্দার আড়ালে অগণতান্ত্রিক শক্তিসমূহ রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হয়ে যায়, যা গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিএনপি গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। জিয়াউর রহমান বাকশাল থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন, খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এখন আমরা মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছি। আমরা মনে করি, নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা গেলেই দেশের মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।’

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ