প্রকাশিত: ১১:২৫ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩
ইউএস বাংলা বার্তা ডেস্কঃ
সারা বিশ্বের মানুষ প্রতিদিন ৩৭০ কোটি কাপ চা পান করেন। কেউ চা খায় ঘুম তাড়াতে, কেউ চা খায় স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে, কেউ চা খায় বন্ধুদের সঙ্গ দিতে আর কেউবা নিছকই অভ্যাসবশতই খেয়ে থাকে। চা পান অনেকে মানুষকে বিভিন্ন চিন্তা থেকেও দূরে রাখে। সকালে এক কাপ চা না খেলে দিনটি যেন ভালোই কাটে না।
অতিথি আপ্যায়ন থেকে শুরু করে কাজের ফাঁকে কিংবা অবসর কাটাতে এক কাপ চা না হলে ঠিক মানায় না। শীতে উষ্ণতা পেতে এক কাপ গরম চায়ের তুলনা নেই। মানসিক চাপ হোক বা কাজের চাপ, বিধ্বস্ত লাগলেই চায়ের প্রতি ভরসা করেন অনেকে। চা পান করা দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন সমস্যার জন্য একটি টনিকের মতো। সবুজ, সাদা বা কালো চা কিংবা দুধ চা হোক, এই সতেজ পানীয়টির বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা থেকে শুরু করে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি সবই করতে পারে চা। চা পান কয়েকটি নির্দিষ্ট ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে এবং সেই কারণে এটিকে ক্যানসার-বিরোধী পানীয় হিসাবেও অভিহিত করা হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে নিয়মিত চা পান করেন যারা তাদের নির্দিষ্ট ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি কম থাকে।
বিজ্ঞানীরা গবেষণায় লক্ষ্য করেছেন, কম মাত্রায় ব্ল্যাক টি সেবন করলে মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে কম। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যারা দিনে ২-৩ কাপ চা পান করেন তাদের মৃত্যুর আশঙ্কা, যারা একদমই চা পান করেন না তাদের থেকে ৯-১৩ শতাংশ কম। এই গবেষণাটি মূলত যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের একটি শাখা, ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের গবেষকদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে।
গবেষকরা দেখেছেন যে, যারা দিনে ২-৩ কাপ চা পান করেন তাদের মৃত্যুর আশঙ্কা, যারা একদমই চা পান করেন না তাদের থেকে ৯-১৩ শতাংশ কম। আবার অতিরিক্ত পরিমাণে চা পান করলে কার্ডিও ভাস্কুলার সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তার সাথে ইস্কেমিক হার্টের সমস্যা এবং স্ট্রোকও হতে পারে।
অ্যানালস অফ ইন্টারনাল মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত এই সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, বিশ্বব্যাপী অসংখ্য মানুষ প্রতিদিনই নিয়মিত চা পান করেন। তবে যারা মূলত ব্ল্যাক টি সেবন করেন তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম।
তবে কোন ধরনের চা স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী? দুধ চা, নাকি রং চা? চিকিৎসকদের মতে, যারা নিয়মিত চা খান, তাদের অবশ্যই জানা প্রয়োজন যে দুধ চায়ের চেয়ে রং চা শরীরের জন্য বেশি উপকারী।
জার্মানির বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এক পরীক্ষায় ১৬ জন নারীকে একবার রং চা, আরেকবার দুধ চা পান করতে দেন। তারপর প্রতিবারই আলট্রাসাউন্ড পদ্ধতিতে তাঁদের রক্তনালির প্রসারণ মাপা হয়। এই পরীক্ষায় দেখা যায়, রং চা রক্তনালির প্রসারণ ঘটায়। রক্তনালির প্রসারণ উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্রোগ নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত জরুরি। চায়ে থাকা ক্যাটেচিন রক্তনালির প্রসারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অন্যদিকে দুধ চা রক্তনালির প্রসারণ ঘটাতে ব্যর্থ। কারণ, দুধের মধ্যে থাকে ক্যাসেইন নামের একটি পদার্থ, যা চায়ের মধ্যে থাকা ক্যাটেচিনকে বাধাগ্রস্ত করে। এতে চায়ে দুধ মেশালে চায়ের রক্তনালি প্রসারণের ক্ষমতা একবারেই চলে যায়। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচারের গবেষকেরা পরীক্ষা করে দেখেন, চায়ের প্রভাবে কোষগুলো থেকে সাধারণের তুলনায় ১৫ গুণ বেশি ইনসুলিন নির্গত হয়।
ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে ইনসুলিন নির্গত হওয়া জরুরি। কিন্তু চায়ে দুধ মেশালে এই ইনসুলিন নির্গমনের হার কমতে থাকে। চায়ে যদি ৫০ গ্রাম দুধ মেশানো হয়, তাহলে ইনসুলিনের নির্গমন ৯০ শতাংশ কমে যায়। রং চা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস ও ওজন নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর। কিন্তু দুধ চা ততটা নয়।
কয়েক বছর আগে এক গবেষণায় দেখা গেছে, চায়ের মধ্যে ট্যানিন নামের একটি উপাদান খাদ্যনালির ক্যানসারের কারণ হতে পারে। চুলায় চা পাতা ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্বাল দিলে চায়ের ট্যানিন বেশি বের হয়।
সাধারণ চায়ের দোকানে চা–পাতা ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্বাল দেওয়ার ফলে ট্যানিন বেশি বের হয়, এ রকম চায়ের ক্ষেত্রে কিছু দুধ দরকার। এই দুধ চায়ের ট্যানিনকে আঁকড়ে ধরে এবং তাকে শরীরে মিশতে দেয় না। এ জন্য বেশি জ্বালের চায়ের ক্ষেত্রে দুধ মেশালে উপকার পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু দৈনন্দিন পানের জন্য জ্বাল না দিয়ে টি ব্যাগ দিয়ে রং চা ভালো।
চা পানের ফলে জেনেটিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী মেটাবলিজম হারও প্রভাবিত হয়। এনআইএইচ-র সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, চা তৈরীর সময় প্রয়োজনমত তাপমাত্রা বৃদ্ধি করা, চায়ের সাথে দুধ বা চিনি মেশানো ইত্যাদি মানবদেহে ক্যাফিন মেটাবলিজমের হারকে যথেষ্ট প্রভাবিত করে।
চায়ে আছে এপিগ্যালোক্যাটেচিন-গ্যালেট (ইজিসিজি) নামের এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ, যা খুব কার্যকর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। ভিটামিন সি এর চেয়ে ১০০ গুণ বেশি ফলদায়ক। এটা কোষের ডিএনএকে এমনভাবে সুরক্ষা দেয়, যেন ক্যানসারের প্রভাবে এর রূপান্তর না ঘটে। প্রতিদিন এক-দুই কাপ কালো চা বা সবুজ চা পান করলে ক্যানসারের আশঙ্কা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে ঘুমের অন্তত ১০ ঘণ্টা আগে থেকে ক্যাফেইন এড়িয়ে চলা উচিত। তাতে ভাল ঘুম হয়। যকৃৎ রাতে নিজের শারীরবৃত্তীয় কাজ করতে পারে। হজমশক্তিও ভাল থাকে। চা খাওয়া খারাপ নয়, কিন্তু তাতে দুধ-চিনি মিশিয়ে খেলে সবসময় তা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল হয় না।
সাধারণ কালো চা অ্যান্টি অক্সিড্যান্টের ভরপুর। যা কোষের স্বাস্থ্য ভাল রাখে। বাঙালীরা সাধারণত দুধ চা খেয়ে থাকেন, চায়ের সঙ্গে দুধ ও চিনি মেশালে তার পুষ্টিগুণও বদলে যায়।
চায়ে দুধ মেশালে চায়ের তিতকুটে ভাব কেটে যায়। স্বাদ বৃদ্ধি হয়। কিন্তু অ্যান্টি অক্সিড্যান্টের পরিমাণ কমে যায়। অনেক সময় এমন রাসায়নিক বদল হয় যাতে অম্বল সংক্রান্ত সমস্যা হতে পারে।
দুধে থাকা প্রোটিন, চায়ে থাকা ফ্ল্যাভেনয়েডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, সকালে যে দুধ চা খাওয়ার অভ্য়াস রয়েছে, তাতে দাঁতের স্বাস্থ্যের সমস্যা হয়, তার সঙ্গেই হজমপ্রক্রিয়াতেও বিঘ্ন ঘটায়।
অন্যদিকে কারা সন্ধ্যার সময় চা খেতে পারবেন এবং কারা পারবেন না দুটিই আলাদা আলাদা করে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
কারা সন্ধ্যার সময় চা খাবেন না: ১. যাদের ঘুমের সমস্যা বা ইনসমনিয়া রয়েছে। ২. যারা উদ্বেগে ভুগছেন, স্ট্রেস রয়েছে। ৩. যাদের ত্বক ও চুল দ্রুত শুষ্ক হয়ে যায়। অতিরিক্ত শুষ্কতার সমস্যায় ভুগছেন। ৪. যারা ওজন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। ৫. যাদের ক্ষুধামান্দ্য রয়েছে, খিদে সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে
এছাড়া যাদের হরমোন সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে। যারা কোষ্ঠকাঠিন্য, অম্বল সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগে থাকেন। যাদের গ্যাস-সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে। হজমসংক্রান্ত সমস্যায়, অটো-ইমিউন রোগে যারা ভুগছেন। তাদেরও সন্ধেবেলায় চা খাবেন না।
কাদের সন্ধেবেলায় চা খেতে সমস্যা নেই। যারা রাতের বেলা কাজ করেন, নাইট শিফট রয়েছে। তারা ঘুম কাটাতে খেতে পারেন চা। যাদের গ্যাস-অম্বল সংক্রান্ত সমস্যা নেই। তারা সন্ধেবেলায় চা খেতেই পারেন। যাদের ঘুমের কোনও সমস্যা নেই।
নির্বাহী সম্পাদক ও প্রকাশক – তৌফিকুল আম্বিয়া টিপু
বার্তা সম্পাদক- হুমায়ূন কবীর ফরীদি
উপদেষ্টা: হারুন মিয়া
বাংলাদেশ কার্যালয়- কলকলিয়া বাজার, জগন্নাথপুর, সুনামগন্জ।
প্রধান কার্যালয়- ৮২৪ মেইন স্রীট, মেনচেষ্টার, কানেকটিকাট- ০৬০৪০, যুক্তরাষ্ট্র।
ফোনঃ ০১৭১৭৯৩১৬৫৮(বিডি) +১৮৬০৭৯৬৭৮৮৮(ইউএসএ)
ইমেইলঃ usbanglabarta@gmail.com
Design and developed by Web Nest