প্রকাশিত: ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৫, ২০২৩
ইউএস বাংলা বার্তা ডেস্কঃ
এই মুহূর্তে নির্বাচনে গেলে স্যাংশন (মার্কিন নিষেধাজ্ঞা) আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে যাওয়ার এখনও পরিবেশ তৈরি হয়নি। নির্বাচনে গেলে স্যাংশন আসারও সম্ভাবনা রয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় জিএম কাদের আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চিঠি এসেছে আমাদের কাছে। এই চিঠির গুরুত্ব অনেক। এটা যুক্তরাষ্ট্রের অফিশিয়াল চিঠি। তারা সংলাপ চাচ্ছেন। আমরাও সংলাপের কথা বলে আসছি। আমরা আর কোনো দলের মুখাপেক্ষী থাকতে চাই না। আমরা এখন দলগতভাবে অনেক শক্তিশালী।
পিটার হাসের বক্তব্য আমেরিকা সরকারের ভাষ্য উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, এখন বুঝা গেল এতদিন পিটার হাস নিজের কোনো বক্তব্য দেননি, এটা আমেরিকা সরকারের ভাষ্য। যুক্তরাষ্ট্র এখন অফিশিয়ালি সরকার, বিরোধী দল এমনকি বিএনপিকে জানিয়েছে তারা সংলাপ চাচ্ছেন।
মাঠের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন সিদ্ধান্ত নেবার। নানা বিষয়ে আমাকে ভেবে দেখতে হচ্ছে। এই অবস্থায় যদি আমরা নির্বাচনে যাই আর যদি পরবর্তীতে সরকার সমস্যায় পড়ে তাহলে কী হবে? দেশে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না হয় এবং সরকার যদি সংলাপ না করে তাহলে নির্বাচনে গেলে আমাদের ওপর স্যাংশন আসতে পারে। যদি আলাপ-আলোচনা না করে তাহলে সরকারের ওপর নিশ্চিতভাবে বড় ধরনের স্যাংশন আসতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা যদি ভুল করি তাহলে জাতীয় পার্টি অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে। তাই কোনো অবস্থাতেই ভুল করা যাবে না। অক্টোবরে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। এখন নভেম্বর মাস। এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। কারণ পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে কেউ জানে না। দুই বড় দল মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। কী হবে, কী হতে যাচ্ছে-কেউ জানে না।
জিএম কাদের বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে আছি। ক্ষমতার বাইরে থেকে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার হচ্ছি। আমাদের নেতাকর্মীরা যথাযথ মূল্যায়ন পাচ্ছে না। তারপরেও একটা বিষয় প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি, তা হচ্ছে জাতীয় পার্টি আছে। মাথা উঁচু করে আছে।
মাঠের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের ডেকেছি। আপনাদের কথা শুনেছি। আপনাদের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব। আমি এমন সিদ্ধান্ত নিতে চাই না, যাতে দলের নেতাকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে জিএম কাদের বলেন, হঠাৎ করে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। এরজন্য আরও সময় লাগবে। জাতীয় পার্টিকে অতীতে নানাভাবে বিভক্ত করা হয়েছে। দুর্বল করে রাখা হয়েছে। এখন আমরা ঐক্যবদ্ধ। এখন আমরা অনেক শক্তিশালী। তাই আমাদের ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অতীতে আমরা যখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেছি, কিছু লোক পেছন থেকে তা নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র করেছে। আগামীতে আর এরকমটা হবার সম্ভাবনা নেই। কারণ জাতীয় পার্টি এখন আগের চাইতে অনেক বেশি শক্তিশালী। এটাই আমাদের এখন শক্তির উৎস।
তিনি বলেন, সবার মতামত নিয়ে, সবার সঙ্গে কথা বলে আমি সিদ্ধান্ত নেব। আমার সিদ্ধান্ত কারও মতের বিরুদ্ধেও যেতে পারে। কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত সবাইকে মেনে নিতে হবে।
এর আগে নির্বাহী কমিটির বৈঠকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে জিএম কাদেরের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেন দলটির মাঠের নেতারা। একইভাবে জোটবদ্ধভাবে নাকি এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি- এই সিদ্ধান্তও নেবেন জিএম কাদের। দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বাস্তবতাকে বিবেচনায় রেখে দলটির তৃণমূলের নেতারা এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার জিএম কাদেরের ওপর অর্পণ করেন।
বেলা ১১টায় শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এই বৈঠক চলে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সভাপতিত্বে এবং পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপির সঞ্চালনায় সারা দেশ থেকে আসা জাতীয় পার্টির ৬৩ জন তৃণমূল নেতা এ সময় বক্তব্য রাখেন। জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপিসহ দলের শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশই সভায় উপস্থিত ছিলেন। তবে তারা কেউ বক্তব্য রাখেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রুদ্ধদ্বার বৈঠকে জেলা ও উপজেলাসহ মাঠপর্যায় থেকে ছুটে আসা নেতারা বিভিন্ন ইস্যুতে মন খুলে কথা বলেন। কোনো কোনো নেতা তাদের বক্তব্যে যথাযথ দলের ভেতরে মূল্যায়ন না হওয়াসহ নানা বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে না পারার ব্যর্থতার কথাও তুলে ধরেন অনেক নেতা। তবে বেশিরভাগ নেতাই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করার বিষয় নিয়ে কথা বলেন। বেশিরভাগ তৃণমূল নেতা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা বলেন। তাদের মতে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচনে অংশ নিলে লাভবান হয় আওয়ামী লীগ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় জাতীয় পার্টি। এ বিষয়টি মাথায় রাখার কথা বলেন তারা। আবার তৃণমূল নেতাদের কেউ কেউ বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরামর্শ দেন।
অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা পাওয়া গেলে এককভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষেও মতামত দেন মাঠ পর্যায়ের অনেক নেতা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দোদুল্যমান অবস্থার মধ্যেই জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এই সভা অনুষ্ঠিত হলো। মাঠের নেতাদের বক্তব্য শেষে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন জিএম কাদের।
এ সময় তিনি চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সর্বশেষ ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকসহ সাম্প্রতিক বিষয়গুলো তুলে ধরে বলেন, আগামী নির্বাচন জাতীয় পার্টির জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে জয়ী হতে হবে। দলের এবং দেশের স্বার্থে তিনি সময়মতো সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান জিএম কাদের। এ সময় মাঠের নেতাদের তার ওপর আস্থা রাখারও পরামর্শ দেন তিনি। জবাবে মাঠের নেতারাও এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ওপর অর্পণ করেন।
সুত্রঃ যুগান্তর
নির্বাহী সম্পাদক ও প্রকাশক – তৌফিকুল আম্বিয়া টিপু
বার্তা সম্পাদক- হুমায়ূন কবীর ফরীদি
উপদেষ্টা: হারুন মিয়া
বাংলাদেশ কার্যালয়- কলকলিয়া বাজার, জগন্নাথপুর, সুনামগন্জ।
প্রধান কার্যালয়- ৮২৪ মেইন স্রীট, মেনচেষ্টার, কানেকটিকাট- ০৬০৪০, যুক্তরাষ্ট্র।
ফোনঃ ০১৭১৭৯৩১৬৫৮(বিডি) +১৮৬০৭৯৬৭৮৮৮(ইউএসএ)
ইমেইলঃ usbanglabarta@gmail.com
Design and developed by Web Nest