এবার সরকারবিরোধী ‘বৃহত্তর জোটের’ উদ্যোগ বিএনপির

প্রকাশিত: ৩:৪১ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৩০, ২০২২

এবার সরকারবিরোধী ‘বৃহত্তর জোটের’ উদ্যোগ বিএনপির

ইউএস বাংলা বার্তা ডেস্কঃ সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে ‘বৃহত্তর জোট’ করার উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে বিএনপি৷ বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়েই দ্রুত ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব৷

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ডয়চে ভেলের কাছে ‘বৃহত্তর জোট’ গঠনের উদ্যোগের কথা জানালেও এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি৷ তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, ‘‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে শুক্রবার ভার্চুয়াল বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷ তার সম্মতি এবং সর্বসম্মতভাবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়৷’’

জোট পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও গত জাতীয় নির্বাচনের সময় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছাড়াও আরো অনেকে এই জোটে থাকবে৷ তিনি জানান, ‘‘আরো অনেক দল মনে করে এখন সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলনের সময় এসেছে৷ এজন্য আরো বড় জোট দরকার৷ আর সে কারণেই বৃহত্তর জোট গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷’’

তবে এর কাঠামো এবং নাম কী হবে তা চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান তিনি৷ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে পরে তা নির্ধারণ করবেন তারা৷ ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘‘আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কথা বলা এখনো শুরু করিনি, তবে সহাসাই শুরু করব৷’’


বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্তত তিনজন সদস্য জানান, বৃহত্তর জোট নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিস্তারিত জানাবেন৷ তাকেই এ বিষয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘‘এটা আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য এই সরকার সব ব্যবস্থা চূড়ান্ত করেছে৷ তারা নির্বাচন কমিশন আইনও করেছে একই উদ্দেশে৷ তাই এই সরকারকে সরিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নাই৷ সে কারণেও আরো বড় জোট করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তারেক রহমান৷’’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা বৃহত্তর জোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ আলাপ আলোচনা চলছে৷ তবে কোন দাবি এবং কী উদ্দেশে এই জোট হবে, কারা থাকবেন তা বিস্তারিত সংবাদ সম্মেলন করে জানাব, এখন নয়৷’’

বিএনপি-জামায়াতের ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছাড়া আরো যারা এই এক দফা দাবির সাথে একমত হবে তাদের সবাইকেই জোটে নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে তারা জানান৷ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ শেষ করে করোনা কমে এলেই আনুষ্ঠানিকভাবে জোটের কাজ শুরু করতে চান তারা৷
২০ দলীয় জোটের শরীক এবং কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, ‘‘আমি অসুস্থ ছিলাম ফলে সবশেষ আপডেট জানি না৷ তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে আমরা বড় জোটের কথা আগে থেকেই বলে আসছিলাম৷ বিএনপির স্থায়ী কমিটি যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছে অবশ্যই বড় জোট করা হবে৷ এটার প্রয়োজন আছে৷ গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে৷’’

জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের শরীক এবং নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘বৃহত্তর জোট নিয়ে আমার সাথে বিএনপির কথা হয়নি৷ ঐক্য ফ্রন্টের অন্যদের সাথেও কথা হয়নি৷ তবে এই জোটের কথা তারা আরো আগে থেকেই বলছেন৷ এখন হয়তো তারা আনুষ্ঠানিক কথা বলবেন৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘গণ আন্দোলনের জন্য বৃহত্তর জোটের কোনো বিকল্প নেই৷ এটা এক মঞ্চেও হতে পারে৷ আবার আলাদা আলাদা মঞ্চের একটা জোটও হতে পারে৷ এটা হতেই হবে যদি সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে চাই, সরকারের পরিবর্তন চাই৷’’
বিএনপির উদ্যোগে এই বৃহত্তর জোট করার প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘‘এরশাদের সময় আ স ম রবের নেতৃত্বেও ১২০ দলের একটি জোট হয়েছিলো৷ তারা একটি আসনও পায়নি৷ বিএনপি- জামায়াতের এইসব উদ্যোগ নিয়ে আমরা বিচলিত নই৷ কারণ আমাদের শক্তি জনগণ৷ বিএনপি যদি পারত অনেক আগেই সরকারের পতন ঘটিয়ে ফেলত৷ এখন আরো যারা জোটে যোগ দেবে তাদেরও সেই ক্ষমতা নাই৷ জনগণ যতদিন আওয়ামী লীগের সাথে আছে ততদিন এইগুলো নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো ভাবনা চিন্তা নেই৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়, দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার বিচারের সময় বিএনপি-জামায়াত এক হয়ে সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছে কিন্তু পারেনি৷ কারণ জনগণ তাদের সাথে নেই৷ এটা প্রমাণিত যে জনগণের সমর্থন ছাড়া আন্দোলন সফল হয় না৷ বিএনপির সাথে জনগণ আগেও ছিলো না, এখনও নাই৷’’
ডয়চে ভেলে

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ