করোনায় থমকে গেছে বিএনপির কর্মসূচির গতি

প্রকাশিত: ১০:৪৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩০, ২০২২

করোনায় থমকে গেছে বিএনপির কর্মসূচির গতি

ইউএস বাংলা বার্তাঃ দেশব্যাপী করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় থমকে গেছে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিসহ সব সাংগঠনিক কার্যক্রম। সভা, সমাবেশসহ মাঠের সব কর্মসূচি, এমনকি- যাবতীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে আগামী মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজপথের সব কর্মসূচি বন্ধ রেখে ঘরোয়া ও ভার্র্চুয়াল প্রোগ্রামগুলো চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিকে মাঠের কর্মসূচি স্থগিত থাকলেও পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে একটি ‘বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট’ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

দলের নীতি-নির্ধারণী মহলের একাধিক সদস্য এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস  বলেন, সংক্রমণের কারণে জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে আপাতত কর্মসূচিগুলো শিথিল রাখা হয়েছে। করোনা হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আবারও পুরোদমে শুরু হবে রাজপথের কর্মসূচি। তখন দেখতে পাবেন আন্দোলন কাকে বলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের অপর একজন নীতি-নির্ধারক জানান, করোনা পরিস্থিতি একটু শিথিল হলে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয়ার্ধেই ফের মাঠে নামার আশা করছেন তারা। তার আগেই সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনের ‘হোমওয়ার্ক’টা সেরে ফেলতে চায় বিএনপি। এই লক্ষ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যকে দায়িত্ব দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।করোনায় সভা, সমাবেশ সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ : করোনা পরিস্থিতি ব্যাপক আকার ধারণ করায় দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিসহ সব সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে বিএনপি।

সর্বস্তরের কমিটি পুনর্গঠনসহ জেলা-উপজেলার (অফ লাইনের) সম্মেলনগুলোও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পূর্বঘোষিত সারা দেশে ৩৩টি জেলার সমাবেশ কর্মসূচি স্থগিত রেখে স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে ঘরোয়া কর্মসূচিগুলো চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।বিএনপির পরবর্তী কার্যক্রম প্রসঙ্গে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, বিএনপির জনস্রোতে ভয় পেয়ে সরকার করোনা বৃদ্ধির নামে ‘বিধি-নিষেধ’ জারি করেছে। কারণ বিএনপির সভা-সমাবেশ কর্মসূচি ছাড়া আর কোথাও সরকারের এই বিধি-নিষেধের বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না।

এদিকে স্থায়ী, উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির কমপক্ষে ২০ জন সিনিয়র নেতা করোনা পজিটিভ হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ও নিচ্ছেন।

তার চেয়েও বেশি সংখ্যক নেতা বাসায় আইসোলেশনে আছেন। বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা-কর্মী করোনা পজিটিভ হওয়ার কারণে সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির বৈঠকের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পুনরায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেন।জানা গেছে, নতুন করে সস্ত্রীক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন- বিএনপি দলীয় এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। দলের স্থায়ী কমিটির বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার করোনা আক্রান্ত হয়ে এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন। স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সস্ত্রীক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। নজরুল ইসলাম খানের স্ত্রী লুৎফুন নাহার কান্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। ফলে নজরুল ইসলাম খান নিজেও এখন আইসোলেশনে। বিএনপির অপর ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুসহ দলটির একাধিক নেতা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। আজ কিংবা কালের মধ্যে তিনি আবারও করোনা পরীক্ষা করাবেন বলে জানান। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন- খন্দকার মুক্তাদির হোসেন ও ইসমাইল হোসেন জবিউল্লাহ। দলের যুগ্ম-মহাসচিব ও ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলও করোনা পজিটিভ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে আক্রান্তদের সবার শারীরিক অবস্থাই মোটামুটি ভালো বলে জানা গেছে। কারও ক্ষেত্রেই তেমন কোনো জটিলতা দেখা যায়নি। এর আগে পরিবারসহ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ চিকিৎসা নেওয়ার পর করোনামুক্ত হন।

জোট গঠন ও আন্দোলনে নামার ভাবনা : নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের এক দফা দাবিতে আগামী মাসেই রাজপথে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে ‘বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য’ গড়তে বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করা হবে। ফেব্রুয়ারির শেষ কিংবা মার্চের প্রথমার্ধ থেকেই যাতে সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে অন্তত পক্ষে একটা যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলা যায়- সে লক্ষ্য নিয়েই সামনে এগোচ্ছে বিএনপি। গত শুক্রবার রাতে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবি এখন সবার। এ ইস্যুতে আমরা বৃহত্তর ঐক্য গড়তে চাই। এ প্রক্রিয়া অনেক আগেই শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কয়েকটি দল এবং ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি দল বিএনপির সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে। শিগগিরই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করা হবে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ছাড়া সব দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হবে।

জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত সব দলকে মতবিনিময় সভায় আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য তিনজন সিনিয়র নেতাকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগসহ বৈঠকের তারিখ নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়।সুত্রঃ বা প্র

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ