জগন্নাথপুরে সুদের ব্যবসা জমজমাট, অসহায় হত-দরিদ্র জনগোষ্ঠী

প্রকাশিত: ৮:২৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩, ২০২৪

জগন্নাথপুরে সুদের ব্যবসা জমজমাট, অসহায় হত-দরিদ্র জনগোষ্ঠী

 

হুমায়ূন কবীর ফরীদি ##

জগন্নাথপুর উপজেলা সদরসহ সর্বত্রই বেড়ে চলেছে রকমারি সুদের ব্যবসা। ভিন্ন মেয়াদি মহাজনি সুদের ফাঁদে জিম্মি হয়ে পড়েছেন কিংবা পড়ছেন অসহায় হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী। এছাড়াও মহাজনী সুদ অর্থাৎ কম টাকার বিনিময়ে বৈশাখ মাসে ধান ক্রয়ের ব্যবসা। ধর্মীয় অনুশাসন ও সরকারের বিধিনিষেধ অমান্য করে আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অসাধু সুদ ব্যবসায়ীরা বনে যাচ্ছে পাহাড় সমান কালো টাকার মালিক। আর অভাব অনটনের সংসারে অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থানের প্রয়োজনে সুদের ঋণ গ্রহীতারা হারাচ্ছে ভিটেমাটি ও সহায় সম্পত্তি সহ অনেক কিছু।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, মানুষকে নিঃস্ব করার অন্যতম সুদের ব্যবসা সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা সদরসহ সবকটি ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রাম গুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। অসাধু সুদ ব্যবসায়ীরা দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে সুদের ব্যবসা অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে। এবং মহাজনী সুধ অর্থাৎ সুবিধাভোগী ধান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চলতি অগ্রহায়ণ মাসে হতদরিদ্র কৃষকেরা ১মন ধানের বিনিময়ে ৫০০/৬০০ টাকা নিচ্ছেন। এই ধান বৈশাখ মাসে মহাজনকে দিবেন কৃষকেরা।অথচ তখন ১ মন ধানের মূল্য হবে ১০০০/১১০০ টাকা। অপ্রিয় হলেও বাস্তবতা অত্র এলাকায় সুদের ব্যবসা মহামারী আকার ধারন করেছে। সুদ ব্যবসায়ীদের রোষানলে পড়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন সমাজের মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও শ্রমজীবী পরিবারের সাধারণ মানুষেরা। উপজেলার অনেক জায়গায় কয়েকজন মিলে নাম স্বর্বস্ব সমিতি গঠন এর মাধ্যমে, কোনো কোনো ব্যক্তি কৃষি লোন এমনকি অত্র এলাকার হাট-বাজার এর কতিপয় ব্যবসায়ী সরকার ব্যাংক কিংবা এনজিও সংস্থা থেকে লাখ লাখ টাকা শিল্প লোন উত্তোলন করে সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে চড়া সুদে হতদরিদ্র মানুষের মাঝে ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে ঋন প্রদান করছে। কিন্তু এদের ঋণ দানের সরকারি অনুমতি নেই। অথচ দিনের পর দিন কোনো বাঁধা বিপত্তি ছাড়াই অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে সুদের ব্যবসা। এই ব্যবসার ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছেন সমাজের অধিকাংশ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের দিন মজুর মানুষ। স্থানীয় ব্যাংক ও বীমা থেকে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ ঋণ উত্তোলন করতে পারেননি বলেই বিপদে- আপদে অনেকটা বাধ্য হয়েই মহাজনি সুদের টাকা নিয়ে থাকেন হতদরিদ্র মানুষেরা। পরে মহাজনের দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সুদ সহ আসল টাকা পরিশোধ করতে না পারলেই সুদ ব্যবসায়ীদের হাতে নানাবিধ লাঞ্চনার স্বীকার হতে হয় ঋণ গ্রহীতাদের। হারাতে হয় সহায় সম্পত্তি, ভিটেমাটি ও গৃহপালিত পশু সহ অনেক কিছু।উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়ন এর গ্রাম, মহল্লা ও পাড়ার কিছু নারী-পুরুষ ও বাজারের ব্যবসায়ীরা মহাজনি প্রথায় চালাচ্ছেন সুদের ব্যবসা। চড়া সুদে ঋণ গ্রহীতাদের কেউ ব্যবসা করতে, বিদেশ গমনে, সিএনজি, অটোরিক্সা ক্রয়ে বা বিভিন্ন অসুবিধায় সুদ ব্যবসায়ীদের নিকট হতে ১০০/৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর কিংবা টিপ দিয়ে টাকা নেন। আর এই স্ট্যাম্পে সাক্ষী হিসেবে সুদ ব্যবসায়ীরা নিজের পছন্দের লোকদের সাক্ষী রাখেন। এবং ইচ্ছা মতো তারা স্ট্যাম্প পূরণ করে রাখেন ও অনেক সময় প্রয়োজন মতো লেখার জায়গা ফাঁকা রাখেন। বেকায়দায় পড়া সুদের ঋণ গ্রহীতারা সুদ ব্যবসায়ীদের চাপে অনেকে জমির দলিলপত্র, স্বর্ণালংকার, চাকুরীজীবিরা বেতনের চেকও বন্ধক রাখতে বাধ্য হচ্ছেন সুদ ব্যবসায়ীদের কাছে। বেকায়দায় পড়া লোকদের ঋণ দিয়ে দেড় থেকে দুই গুন মুনাফা আদায় করছে এই ব্যবসায়ীরা। এভাবে সুদ ব্যবসয়াীরা সম্পদের পাহাড় গড়ছেন। অন্যদিকে সাধারণ ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ দিন দিন গরীব ও ভূমিহীন হচ্ছেন।
নান প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান, সুদের ব্যবসা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। এই সুদের ব্যবসায় পুরুষের পাশা-পাশি নারীরাও রয়েছে। সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে টাকা আদায় করে তারা।এই ব্যবসার মাধ্যমে অনেক সুদখোর বিত্তহীন থেকে বিত্তবান হওয়ার পাশাপাশি টিনের ঘর থেকে দু’তলা বাড়ী পর্যন্ত বানিয়েছে। যা জনসম্মুখে দৃশ্যমান আছে। এই ক্ষতিকর সমাজ বিরোধী অবৈধ সুদ ব্যবসা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোরদাবী জানাচ্ছি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ