হারিছ চৌধুরী ‘জীবিত’ না ‘মৃত’ তদন্তে সিআইডি

প্রকাশিত: ৪:১০ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২২

হারিছ চৌধুরী ‘জীবিত’ না ‘মৃত’ তদন্তে সিআইডি

ইউএস বাংলা বার্তা ডেস্কঃ একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু হয়েছে দাবি করেছে পরিবার। তার মেয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে খবর ছাপিয়েছে গণমাধ্যমও। তবে পলাতক হারিছ চৌধুরী জীবিত না মৃত তা নিশ্চিত হতে তদন্তে নেমেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বিষয়টি নিশ্চিত হতে পুলিশ সদর দফতর থেকে সিআইডিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে সংস্থাটির সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগ এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।

হারিছের পরিবারের দাবি, গত বছর সেপ্টেম্বরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। তাকে ঢাকার কাছে একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

এদিকে, হারিছ চৌধুরীকে ধরিয়ে দিতে এখনো আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে তার নামে রেড নোটিস ঝুলছে।

সিআইডি সূত্র জানায়, ১৯ জানুয়ারি হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিশ্চিত হতে সিআইডিকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। এরপর ২৫ জানুয়ারি সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে সিরিয়াস ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান খান একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, পুলিশ সদর দফতর থেকে তদন্তের জন্য অনেক চিঠি আসে। ওই বিষয়ে তদন্তের জন্য চিঠি আসছে কি না দেখতে হবে।

২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে আত্মগোপনে চলে যান হারিছ চৌধুরী। এর পর থেকে তাকে ধরিয়ে দিতে ইন্টারপোলে রেড নোটিস জারি করা হয়। ১৪ বছর ধরে এই নোটিস ঝুললেও তার অবস্থানের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না বা তাকে গ্রেফতার করা যায়নি।

পুলিশ সদর দফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত নই ওই আসামি মারা গেছেন কি না। গণমাধ্যমে এ ধরনের খবর আমাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য সিআইডিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাটি তদন্ত করেছিল সিআইডি। ওই সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হারিছ চৌধুরীসহ ওই মামলার পলাতক কয়েকজন আসামির বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারির আবেদন করা হয় ইন্টারপোলে। আন্তর্জাতিক সংস্থাটি যাচাই-বাছাই শেষে এই নোটিস তাদের ওয়েবসাইটে দেয়। এখন তদন্ত শেষে সিআইডি যদি ওই আসামির মৃত্যু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে, তাহলে ওই নোটিস সরানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইন্টারপোলের রেড নোটিস বাতিলের জন্য হারিছ চৌধুরীর পরিবার মৃত্যুর সংবাদ ছড়াচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হারিছ চৌধুরীর পরিবারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে দুই ধরনের বক্তব্য আসে। তার চাচাতো ভাই দাবি করেছেন, হারিছ চৌধুরী যুক্তরাজ্যে মারা গেছেন। আবার তার মেয়ে দাবি করেন, ঢাকাতেই মারা গেছেন তিনি।

গত রোববার (৩০ জানুয়ারি) ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে গিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন অপরাধে পলাতক বাংলাদেশের রেড নোটিসধারী ৪৯ জনের মধ্যে হারিছ চৌধুরীর নাম ও ছবি ১৩ নম্বরে রয়েছে। সেখানে তার নাম চৌধুরী আবুল হারিছ লেখা। এতে তার জন্মতারিখ থেকে শুরু করে জন্মস্থান, জাতীয়তা, উচ্চতা, ওজন, চুল ও চোখের রংসহ শারীরিক বিবরণ রয়েছে। রেড নোটিসে তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ রয়েছে।

হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে তার চাচাতো ভাই আশিক চৌধুরী ফেসবুকে স্ট্যাটাসে ইঙ্গিত দিলেও সরাসরি কিছু বলেননি। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, হারিছ চৌধুরী লন্ডনে মারা গেছেন। এরই মধ্যে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামীরা তানজীন চৌধুরী মুন্নু জানান, তার বাবা গত ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। তিনি হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু, দাফন ও ঢাকায় আত্মগোপনে থাকাসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ