জগন্নাথপুরে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত, গ্রাম্য সালিশে সমাধানের সম্ভবনা

প্রকাশিত: ১:৫৩ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৫

জগন্নাথপুরে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত, গ্রাম্য সালিশে সমাধানের সম্ভবনা

হুমায়ূন কবীর ফরীদি, ঘটনাস্থল থেকে ফিরে এসে##

জগন্নাথপুর এর পল্লীতে পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে মারামারিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে আড়াই  ঘন্টা ব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তমধ্যে গুরুতর আহত এক জন সিলেট এম এ জি ওসমানী  হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এবং জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে ১জনকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। বিষয়টি গ্রাম্য সালিসির মাধ্যমে মীমাংসা হবে বলে জানা গেছে।
ঘটনার বিবরণে জানাযায়, ১৩ ই ফেব্রুয়ারী রোজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যারাতে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর -তেলিকোনা সড়কের কাদিপুর ব্রীজের পশ্চিম পার্শ্বে জগন্নাথপুর উপজেলার ১নং কলকলিয়া ইউনিয়ন এর অন্তর্ভুক্ত জগদীশপুর গ্রাম নিবাসী অটোরিক্সা চালক চান মিয়া ও সাদিপুর গ্রাম নিবাসী কার চালক নিক্সন মিয়ার মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা মীমাংসার লক্ষে ১৪ ই ফেব্রুয়ারী রোজ শুক্রবার সকালে উভয় গ্রামের মুরুব্বীরা জগদীশপুর গ্রামে সালিশ বৈঠকে বসেন। এ সময় দুই গ্রামের তরুন যুবকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হলে সাদিপুর গ্রামের লোকজন বৈঠক থেকে চলে যান। পরে এরই জের ধরে বাদ জুম্মা  দুপুর ২টার দিকে জগদীশপুর ও সাদিপুর গ্রামবাসী দেশীয় অস্ত্র -শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জগদীশপুর গ্রামের পূর্ব পার্শ্বে আমন ক্ষেতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি এসময়  সাদিপুর গ্রামের সংঘর্ষকারীরা জগদীশপুর গ্রামের বিভিন্ন বাড়ীতে ভাংচুর করার পাশা-পাশি মসজিদেও ইটপাটকেল ছুঁড়েছেন। দুই ঘন্টা ব্যাপী এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের নূর ইসলাম (৩৩),কামাল আহমদ (৩৬), ইমন মিয়া (২৩), সোহাগ (১৪), দুকু মিয়া (৪৭), গফ্ফার মিয়া (২৫), মাহফুজ মিয়া (১৭), রুমান (২৫), আলাই মিয়া (৩৯), আব্দুর রউফ (৩৫) সাদিকু্ল রহমান (২০) ও সালিসি ব্যক্তিবর্গ সহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তমধ্যে গুরুতর আহত নূর ইসলাম (৩৩) সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। অন্যান্য আহতরা জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ১ জনকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক জান্নাতুল ফেরদৌস জানিয়েছেন। সংঘর্ষের খবর পেয়ে তৎক্ষনাৎ অর্থাৎ সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে  জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহফুজ ইমতিয়াজ ভূঁইয়ার নির্দেশনায় জগন্নাথপুর থানার এসআই (সেকেন্ড অফিসার) সাকিব হাসান এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সংঘর্ষ থামানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালান।এবং জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ বরকত উল্লাহ, জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহফুজ ইমতিয়াজ ভূঁইয়া ও ছাতক সেনা ক্যাম্পের কমান্ড্যাড অফিসার হোসাইন আহমদ এর নেতৃত্বে একদল সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করতে সক্ষম হন। এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। বিষয়টি গ্রাম্য সালিশির মাধ্যমে মীমাংসা হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

এ ব্যাপারে প্রত্যক্ষদর্শী পথচারী ও এলাকার নিরপেক্ষ একাধিক ব্যক্তি একান্ত আলাপকালে বলেন, যানবাহন শ্রমিকদের মারামারিকে কেন্দ্র করে দুটি গ্রামের লোকজন এর মাঝে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে অনাকাঙ্ক্ষিত এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সাদিপুরের সংঘর্ষকারীরা জগদীশপুর গ্রামের বিভিন্ন বাড়ীতে ভাংচুর করার পাশা-পাশি মসজিদে অবস্থানরত মানুষকেও ইটপাটকেল ছুঁড়েছেন। গুরুতর আহতদের তাৎক্ষণিক ভাবে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আল্লাহ মেহেরবান যথাসময়ে থানা পুলিশ আসায় ও সালিসি ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে দুটি গ্রামের লোকজনই রক্ষা পেয়েছেন। তারা আরো বলেন, সাদিপুর গ্রামবাসীর আক্রমনের এক পর্যায়ে জগদীশপুর গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে বিষয়টি এলাকাবাসীকে অবহিত করা হয়।

এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মোঃ আব্দুস সোবহান মুঠোফোনে একান্ত আলাপকালে বলেন, আমি সহ ১ নং কলকলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ রফিক মিয়া,  সমাজ সেবক ও সালিশি ব্যক্তি সুহেল মিয়া, সালিশি ব্যক্তি আব্দুস ছালাম ও হুমায়ূন কবির সহ আরো অনেকে সাদিপুর ও জগদীশপুর গ্রামের মুরুব্বীগণের সাথে কথা বলেছি বিষয়টি গ্রাম্য সালিসির মাধ্যমে মীমাংসা করার জন্য। উভয় গ্রামের মুরুব্বীগণ গ্রামীণভাবে সমাধানের সম্মতি দিয়েছেন। ইনশাআল্লাহ এলাকার মুরব্বিয়ানদের সহযোগিতায় সুন্দর পরিবেশ ফিরে আসবে।
এব্যাপারে জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহফুজ ইমতিয়াজ ভূঁইয়া বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে প্রশাসনিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় থানায় মামলা হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ