জগন্নাথপুরের ঐতিহ্য ‘ ফুড়ির বাড়ী ইফতারী’

প্রকাশিত: ৭:২৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩, ২০২৫

জগন্নাথপুরের ঐতিহ্য ‘ ফুড়ির বাড়ী ইফতারী’

জগন্নাথপুর প্রতিনিধিঃ

রমজান মাসে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে ‘ফুড়ির (মেয়ে) বাড়ি ইফতারি’ পাঠানোর অতি পুরোনো সামাজিক একটি রেওয়াজ বহু বছর ধরে চলে আসছে। রমজান মাস এলেই ধনী-গরিব প্রায় সব মুসলিম পরিবারে মা-বাবাদের তাগিদ শুরু হয় ‘ফুড়ির বাড়ী ইফতারি’ পাঠানোর। দেওয়া হচ্ছে নতুন জামাকাপড়। চলে নানা প্রস্তুতি। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি রমজানে সুনামগঞ্জ জেলার প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুরের লোকজন সামর্থ্য অনুযায়ী ইফতার প্রস্তুত করে থাল সাজিয়ে ইফতার পাঠাচ্ছেন ‘ফুড়ির বাড়ী’। উপজেলা সদর সহ বিভিন্ন হাটবাজারে রেস্টুরেন্টে প্রতি বছরের মতো এবারও দেড় হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে ইফতারির থাল সাজানো হচ্ছে যা ‘ফুড়ির বাড়ীর ইফতারি’ হিসেবে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। নতুন বিবাহিতদের বাড়ী সাধারণত মোরগ পোলাও, কোরমা, আখনি, মিষ্টি-নিমকি, জিলাপি, খাজা, বাকরখানি, চানাভুনা, পিঁয়াজু, ফিরনি, হরেক পদের পিঠা, মৌসুমি ফলে ভরা টুকরিসহ নানা ইফতারি নিয়ে শালা-শালিরা দুলাভাইয়ের (পুড়ির বাড়ি) বাড়িতে হাজির হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা সদরের এক রেস্টুরেন্টের মালিক জানালেন, রোজার প্রথম দিনে অর্থাৎ ২ রা মার্চ ১ শতটি থাল বিক্রি হয়েছে। তৃতীয় দিনেও প্রায় সমপরিমানে বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও গ্রামীণ হাটবাজারের একাধিক রেষ্টুরেন্ট এর মালিক একান্ত আলাপকালে বলেন, ফুঁড়ির বাড়ীর থাল অর্থাৎ ফুড়ির বাড়ীর ইফতারি ভালোই বিক্রি হচ্ছে।
অনেকের সাথে আলাপ করে জানাযায়, আগের দিনে ইফতারের জন্য দাওয়াত দেওয়া হতো। এখন আর আগের মত দাওয়াত দেওয়া হয় না। ইফতারী করানো লোকের বাড়িতে তখন পাড়া-প্রতিবেশীকেও দাওয়াত করা হতো। এখানেই শেষ নয়, দুলাভাইয়ের জন্য পাঞ্জাবি আর বোনের জন্য শাড়ি, এমনকি বিয়াই-বিয়াইনকেও পাঞ্জাবি ও শাড়ি দেওয়া হতো এখন আর হয় না। আবার শালা-শালিরাও ফেরার সময় দুলাভাইয়ের কাছ থেকে বড় অঙ্কের গিফট নিয়ে ফিরত। অবস্থাপন্ন পরিবারের জন্য এটি আনন্দের ব্যাপার হলেও স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য এটি কষ্টদায়ক ছিল। অনেকেই লোকলজ্জার ভয়ে এই রীতি পালন করেছেন বা আজো করা হচ্ছে। কিন্তু আজকাল বাস্তবতার নিরিখে ‘পুড়ির বাড়ি ইফতারি’ পাঠানো নিয়ে মতভেদ শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, এই ব্যয়বহুল সামাজিক প্রথা পরিহার হওয়া প্রয়োজন। আবার অনেকেই যুক্তি দিয়ে বলেন, এই রীতি সামর্থ্য অনুযায়ী আত্মীয়তার বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করে।
এ ব্যাপারে তাপসী হোটেল এর মালিক কামাল মিয়া বলেন, আজ সকাল থেকে নতুন বিবাহিত পরিবারের লোকজন আমার কাছে থাল প্রস্তুত করতে বলে। প্রায় ৫০টির মত মোরগ পোলাও, কোরমা, আখনি, মিষ্টি-নিমকি, জিলাপি, খাজা, বাকরখানি, চানাভুনা সহ বিভিন্ন আইডেম দিয়ে তাল আমি তৈরী করেছি। প্রত্যেক বছর রোজার প্রথম দিন থাল তৈরী করা হয়।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ