প্রকাশিত: ৩:১২ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২২
ইউএস বাংলা বার্তা ডেস্কঃ চিরতরে স্তব্ধ হয়ে গেল কোকিলকণ্ঠ। রবিবার সকাল ৮টা ১২ মিনিটে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ৯২ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী লতা মুঙ্গেশকর। ভারতের নাইটিঙ্গেলখ্যাত এ গায়িকার মৃত্যুতে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কংগ্রেস প্রধান সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধীসহ অন্য নেতারা তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। ভারতরতে এ মৃত্যুর খবর প্রকাশের পরপরই তার বাড়ি প্রভুকুঞ্জে ছুটে যান বলিউড শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চনসহ অন্যরা। একইদিন স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় মুম্বাইয়ের শিবাজি পার্কে লতা মুঙ্গেশকরের শেষকৃত্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয়। শেষকৃত্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। লতার শেষকৃত্য উপলক্ষে মুম্বাই যেন জনতার নগরীতে পরিণত হয়েছিল। খবর পিটিআই ও আনন্দবাজার অনলাইনের।
লতা মুঙ্গেশকর জানুয়ারি মাসের শুরুতে করোনায় আক্রান্ত হন। তখন থেকেই ভর্তি ছিলেন মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালের আইসিইউতে। এক সময় কোভিড-১৯ নেগেটিভ হলেও পরে নিউমোনিয়া ধরা পড়ে তার। চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিলেন। সম্প্রতি প্রবাদপ্রতিম এই গায়িকার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় ভেন্টিলেশন সাপোর্ট খুলে নেয়া হয়। আশার আলো দেখছিলেন চিকিৎসকেরাও। তবে শনিবার লতার শারীরিক পরিস্থিতি ফের অবনতি হয়। শেষ পর্যন্ত সব চেষ্টা ব্যর্থ করে পরলোকে চলে যান এ শিল্পী।
সাত দশক ধরে দর্শক ও সমালোচক হৃদয় তৃপ্ত করে চলা সঙ্গীতের এই মহাতারকা ১৯২৯ সালে ভারতের ইন্দোরে জন্মেছিলেন। কিন্তু তার সঙ্গীত ভারত ছাপিয়ে তাকে পৌঁছে দিয়েছে বিশ্ব সঙ্গীতের দরবারে।
লতা মুঙ্গেশকর ২০০১ সালে ভারতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ভারতরত্ন অর্জন করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারও লাভ করেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আমি শোকে স্তব্ধ। দয়ালু ও যতœশীল লতা দিদি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি জাতির জন্য যে শূন্যতা রেখে গেছেন তা পূরণ হবার নয়।’ প্রখ্যাত এই শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ভারতে দুইদিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। পশ্চিমবঙ্গে আজ সোমবার অর্ধদিবস ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেছেন, আগামী ১৫ দিন রাজ্যে বাজবে লতার গাওয়া গান।
সুর সম্রাজ্ঞীর প্রয়াণে গভীর শোক জানিয়ে মমতা বলেন, ভারতের প্রয়াত আইকন, ভারতরতœ লতা মুঙ্গেশকরকে শ্রদ্ধা জানাই। পরিবার এবং কোটি কোটি গুণমুগ্ধের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।
মমতা আরও বলেন, পৃথিবীজুড়ে তার সব ভক্ত এবং অনুগামীদের মতো, আমিও তার কণ্ঠস্বরে মুগ্ধ হয়েছিলাম এবং কৃতজ্ঞবোধ করেছিলাম। তিনি সঠিক অর্থেই ভারতের নাইটিঙ্গেল। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে হাজারের বেশি সিনেমায় গান করেছেন লতা। ভারতের ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষার পাশাপাশি বিদেশী ভাষাতেও তিনি গান করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ছবি দিয়ে, তার সঙ্গে স্মৃতির কথা লিখে, কিংবা তার কাছে অনুপ্রেরণা পাওয়ার কথা জানিয়ে শোক প্রকাশ করছেন ভারতের বিভিন্ন অঙ্গনের প্রতিনিধিরা। এর আগেও সঙ্কটজনক অবস্থায় একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিলেন লতা। কিন্তু ভক্তদের আশ্বস্ত করে প্রত্যেকবারই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। লতার বাবা দীননাথ মুঙ্গেশকর মারাঠি, তবে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে পারদর্শী। থিয়েটারও করতেন। আর মা সেবন্তী ছিলেন গায়িকা। বাবা-মায়ের কাছ থেকেই শৈশবে গানের প্রতি টান তৈরি হয় লতার।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাবাকে হারান লতা। তার আগে অবশ্য বাবার হাত ধরেই অভিনয় ও গান লেখা শুরু করেছিলেন। ১৩-১৪ বছর বয়সেই প্রথম মারাঠি সিনেমার গানে কণ্ঠ দেন তিনি। মুম্বাই যাওয়ার পর ১৯৪৮ সালে প্রথম হিন্দি সিনেমায় গান করেন তিনি। সিনেমাটির নাম ‘মজবুর’। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে লতাই ছিলেন সবার বড়।
মোদির কাছে শোকপত্র পাঠালেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
বাসস জানায়, ভারতরত্ন লতা মুঙ্গেশকরের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে এক চিঠিতে ভারত সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ শোকের এই মুহূর্তে ভারতের জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে শোক প্রকাশ করছে।’ প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এই তথ্য জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রয়াত লতা মুঙ্গেশকর একজন সাংস্কৃতিক আইকন ও একজন কিংবদন্তি এবং সর্বকালের অন্যতম মেধাবী একজন শিল্পী ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, লতা তার অসাধারণ সুরেলা কণ্ঠে বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষায় অসংখ্য গান গেয়েছেন এবং আমাদের অঞ্চল ও এর বাইরেও লাখ লাখ মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার বাংলা গান এখন বাংলা সংস্কৃতির ভান্ডারের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে লতাজির ভূমিকার জন্য তাকে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি আরও বলেন, লতাজি তার ভারতীয় সহশিল্পীদের সঙ্গে ভারতের জনগণের মধ্যে বাংলাদেশের বিষয়ে প্রচারে ব্যাপক অবদান রেখেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ভারতরতœ লতা মুঙ্গেশকরের বিদেহী আত্মার চির শান্তির জন্য প্রার্থনা করেন। শেখ হাসিনা শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের এবং সারা বিশ্বে শিল্পীর লাখ লাখ ভক্তদের প্রতি তাঁর গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে তাদের এই অপূরণীয় ক্ষতি সহ্য করার শক্তি লাভের জন্য প্রার্থনা করেন।
নির্বাহী সম্পাদক ও প্রকাশক – তৌফিকুল আম্বিয়া টিপু
বার্তা সম্পাদক- হুমায়ূন কবীর ফরীদি
উপদেষ্টা: হারুন মিয়া
বাংলাদেশ কার্যালয়- কলকলিয়া বাজার, জগন্নাথপুর, সুনামগন্জ।
প্রধান কার্যালয়- ৮২৪ মেইন স্রীট, মেনচেষ্টার, কানেকটিকাট- ০৬০৪০, যুক্তরাষ্ট্র।
ফোনঃ ০১৭১৭৯৩১৬৫৮(বিডি) +১৮৬০৭৯৬৭৮৮৮(ইউএসএ)
ইমেইলঃ usbanglabarta@gmail.com
Design and developed by Web Nest