প্রকাশিত: ৮:৫৬ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৬, ২০২২
ইউএস বাংলা বার্তা ডেস্কঃ
ইয়ারোস্লাভ ইয়ুরশ্চিন, এমপি ইউক্রেন পার্লামেন্ট
ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের আজ ২১ দিন। এ ৩ সপ্তাহে ২ শতাধিক শিশু হতাহত হয়েছে। ৯০ শিশু নিহত হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছে ১০০-রও বেশি। এসব শিশুকে হত্যা করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন।
আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না তিনি। মাতৃসদন হাসপাতালে বোমা ফেলা হচ্ছে। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে অবিরাম গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে মারিউপোল, খারকিভ, চেরনিহিভ, কিয়েভসহ ইউক্রেনের সব শহরে। পুতিন যেন তার পূর্বসূরি জোসেফ স্টালিনের পদাঙ্ক করতে বদ্ধপরিকর। স্টালিনের কাছে মানুষের মৃত্যু কোনো ব্যাপারই ছিল না।
যেমনটা তিনি নিজেই বলে গেছেন। তার কথায়, ‘একজন মানুষের মৃত্যু একটা ট্র্যাজেডি। আর লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু পরিসংখ্যান মাত্র।’ ইউক্রেন প্রশ্নে পুতিন জার্মান নেতা অ্যাডলফ হিটলারের পথে হাঁটছেন। ইহুদি প্রশ্নে হিটলার যেভাবে সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিলেন, ইউক্রেনে সেই একই কাজ করে চলেছেন পুতিন।
খেরসনের নোভা কাখোভকায় গাড়ির মধ্যে ১৫ মাস বয়সি ছোট্ট ইভানকে গুলি করে হত্যা : তার পুলিশ অফিসার বাবা সেদিনও খারসনে জরুরি দায়িত্ব পালন করছিলেন। এদিকে রুশ বাহিনী হামলা আরও জোরদার করেছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিবারকে নোভা কাখোভকার বাইরে সরিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব পড়ে ইভানের দাদার ওপর। নিজেদের ব্যক্তিগত গাড়িতে করে শহর থেকে বেরও হয়েছিলেন তারা। কিন্তু পথে কাখোভকা হাইড্রোইলেট্রিক পাওয়ার প্ল্যান্টের কাছে তাদের পথ আগলে দাঁড়ায় রুশ সেনারা। সেদিন দাদা, দাদি, মা, ছয় বছর বয়সি বোনের সঙ্গে ছোট্ট ইভানকেও গুলি করে হত্যা করা হয়।
মারিউপোলে রুশ বাহিনীর গোলায় নিহত ছয় বয়সি তানিয়া : ৮ মার্চ। দোনেস্কের মারিউপোলে সেদিন বৃষ্টির মতো গোলাবর্ষণ করছিল পুতিনের হানাদার বাহিনী। তার একটি গোলা এসে পড়ল তানিয়াদের বাড়ির ওপর। মায়ের নিথর দেহের পাশেই পড়েছিল ছোট্ট তানিয়া। বাড়ির ধ্বংসাবশেষের নিচে থেকে উদ্ধার করা হয় তাদের। আমরা জানি না, সেদিন কত ঘণ্টা ধ্বংসাবশেষের নিচে আটকে ছিল তানিয়া। অনেক চেষ্টা করেও কোনোভাবেই বের হতে পারেনি সে। শরীর পানিশূন্য হয়ে আস্তে আস্তে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। গত কয়েকদিন ধরে টানা নির্বিচারে ও অমানবিকভভাবে মারিউপোল শহরে বোমাবর্ষণ করে চলেছে রুশ বাহিনী। এমনকি শহরের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য মানবিক করিডোর চালুর পরও গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে।
কিয়েভে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে ৯ বছর বয়সি পোলিনাকে : ইউক্রেনে পুতিন বাহিনীর অন্যতম শিকার শিশু পোলিনা। আগ্রাসনের দুদিন পর ২৬ ফেব্রুয়ারি কিয়েভে তাদের বাড়িতে গোলাবর্ষণ করা হয়। এতে নিহত হয় পোলিনার বাবা-মা। গুরুতর আহত পোলিনাকে বাঁচাতে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে সে। নিরীহ ও নিরস্ত্র এমন একটি পরিবারের হত্যাকাণ্ড ঘটে কিয়েভের ওলেনা তেলিহা নামক একটি সড়কে।
ওলেনা তেলিহা ছিলেন ইউক্রেনের খ্যাতনামা একজন কবি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে রাজধানীর বেবিন ইয়ার নামক স্থানে নিয়ে তাকে হত্যা করেছিল হিটলারের নাৎসি বাহিনী। এমন ভয়ংকর ঘটনা আরও রয়েছে। ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলে ওখতিরকা শহরের একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে বোমা ফেলা হয়েছে। ঝিটোমির অঞ্চলের মালিন শহরের আবাসিক এলাকায় বিমান হামলা চালানো হয়েছে। রাজধানী কিয়েভের নিকটবর্তী ইরপিন শহরে মানবিক করিডোর দিয়ে পালানোর চেষ্টাকালে নারী ও শিশুসহ বহু পরিবারকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। মারিউপোলের মাতৃসদন হাসপাতালে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। এগুলো পুতিন ও তার পেটোয়া বাহিনীর চালানো ধ্বংসযজ্ঞের কয়েকটি নমুনা মাত্র।
এমন ভয়ংকর গল্প রয়েছে আরও অনেক : সুমি অঞ্চলের ওখতিরকা শহরের সোনেচকা কিন্ডারগার্টেন এবং নার্সারিতে নির্বিচারে গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। মালিন, জাইটোমির অঞ্চলের আবাসিক এলাকায় বিমান হামলা হয়েছে। কিয়েভ অঞ্চলের ইরপিনে রাশিয়ান সরকারের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে গ্রিন করিডোর দিয়ে সরিয়ে নেওয়ার সময় গুলি করে একটি পরিবারের মৃত্যু হয়েছে। মারিউপোলের প্রসূতি হাসপাতালে বোমা হামলা হয়েছে। যারা পুতিন এবং তার পুতুলদের দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতা সহ্য করতে নারাজ, তাদের জন্য এটি নিশ্চয়ই ঘটনাগুলো একটি নিষ্ঠুর ভূগোল পাঠের মতো। আর যারা এগুলো ভুলে যেতে চান- তাদের জন্য এগুলো অর্থহীন এক একটা নাম মাত্র।
জাতিসংঘ ও বিশ্ব নেতারা পারমাণবিক যুদ্ধের ভয়ে চুপসে আছেন। ইউক্রেনে না ফ্লাই জোন ঘোষণা করতে সাহস পাচ্ছেন না। ভয় পাচ্ছেন ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীকে পর্যাপ্ত বিমান এবং অস্ত্র দিতে। কঠোর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে দ্বিধা করছে। আমি নিশ্চিত, তারা তখন গভীর ঘুমে থাকেন, যখন পুতিনের নাৎসিরা শান্তিপূর্ণ ইউক্রেনীয় শহরগুলোতে রাতভর ভয়ংকর বোমা ফেলতে থাকে। একই অবস্থায় থাকেন সেসব গণতান্ত্রিক দেশগুলোর লাখ লাখ মানুষও। কিন্তু কি বলবে তারা যখন শিশু ইভান, তানিয়া বা পলিনারা তাদের স্বপ্নে হাজির হয়ে প্রশ্ন করেন- আমাদের মৃত্যু রোধে আপনি কী ভূমিকা নিয়েছেন? মুক্ত বিশ্বের নেতারা কী জবাব দেবেন? তারা কি অনুভব করবেন যে পুতিনই একমাত্র নন- যিনি কমপক্ষে ৯০ শিশু এবং শত শত, এমনকি হাজার হাজার শান্তিপ্রিয় ইউক্রেনীয়দের রক্তে রঞ্জিত করেছেন নিজেদের হাতও। সেদিন স্বপ্ন দেখা ভোরে ঘুম থেকে উঠে ভয়ার্ত চিৎকার দিয়েও রেহাই পাবেন না-প্রকৃতি এ অন্যায়ের বিচার একদিন করবেই।
নির্বাহী সম্পাদক ও প্রকাশক – তৌফিকুল আম্বিয়া টিপু
বার্তা সম্পাদক- হুমায়ূন কবীর ফরীদি
উপদেষ্টা: হারুন মিয়া
বাংলাদেশ কার্যালয়- কলকলিয়া বাজার, জগন্নাথপুর, সুনামগন্জ।
প্রধান কার্যালয়- ৮২৪ মেইন স্রীট, মেনচেষ্টার, কানেকটিকাট- ০৬০৪০, যুক্তরাষ্ট্র।
ফোনঃ ০১৭১৭৯৩১৬৫৮(বিডি) +১৮৬০৭৯৬৭৮৮৮(ইউএসএ)
ইমেইলঃ usbanglabarta@gmail.com
Design and developed by Web Nest