শ্রীলঙ্কায় নতুন প্রধানমন্ত্রীর শপথ : মাহিন্দা রাজাপাকসে ও তার মিত্রদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশিত: ৩:৩৪ অপরাহ্ণ, মে ১৩, ২০২২

শ্রীলঙ্কায় নতুন প্রধানমন্ত্রীর শপথ : মাহিন্দা রাজাপাকসে ও তার মিত্রদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ডেস্ক রিপোর্টঃ

শ্রীলঙ্কায় নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। স্থানীয় সময় আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে তাঁকে শপথ পড়িয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে ষষ্ঠবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হলেন তিনি।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্য অনেক নেতার মতোই রাজনৈতিক পরিবার থেকে এসেছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। তাঁর চাচা জুনিস জয়াবর্ধনে এক দশকের বেশি সময় শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সত্তরের দশকের মাঝামাঝিতে রাজনীতিতে আসেন তিনি। ১৯৭৭ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময় প্রেসিডেন্ট ছিলেন জুনিস জয়াবর্ধনে। ওই সরকারেই সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হন তিনি।

তামিল গেরিলাদের হাতে সাবেক প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসা নিহত হওয়ার পর ১৯৯৩ সালে প্রথমবার শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হন বিক্রমাসিংহে। সেবার মাত্র এক বছরের কিছু বেশি সময় ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হন বিক্রমাসিংহে। সে সময় তাঁর বাল্যবন্ধু দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর অর্জুনা মাহেন্দ্রানের বিরুদ্ধে শত শত কোটি ডলার অনিয়মের ঘটনা প্রকাশিত হয়।

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, এর আগে পাঁচবার প্রধানমন্ত্রী হলেও কোনোবারই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি রনিল বিক্রমাসিংহে। চলতি সপ্তাহ শুরু হওয়ার আগেও মনে করা হচ্ছিল, ৭৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদের ক্যারিয়ার শেষ পর্যায়ে। তবে এর পরেই তিনি একটি ঐকমত্যের প্রশাসন পরিচালনা করতে এবং দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপদেশটিকে পঙ্গু অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করতে সম্মত হন।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ষষ্ঠবারের মতো রনিলের শপথ নেওয়াকে ‘ঐতিহাসিক ঘটনা’ বলে অভিহিত করেছেন তামিল আইনপ্রণেতা ধর্মলিঙ্গম সিথাধান। তিনি বলেন, ‘এটা প্রমাণ করে কতটা মরিয়া পরিস্থিতিতে আমাদের দেশ রয়েছে।’

রনিল বিক্রমাসিংহকে পশ্চিমাপন্থী বাজার সংস্কারবাদী হিসেবে মনে করা হয়। অর্থনৈতিক সংকটে ডুবতে বসা শ্রীলঙ্কাকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সহায়তা (বেল আউট তহবিল) এনে দিতে সম্ভাব্য আলোচক হিসেবেও মনে করা হচ্ছিল।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই আর্থিক ও মুদ্রানীতিতে পরিবর্তন আনতে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছিলেন বিক্রমাসিংহে।

ইউএনপির জাতীয় সংগঠক সাগালা রত্নায়াকা আল–জাজিরাকে বলেন, ‘যখন অন্য কোনো সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রী হতে রাজি হননি, তখন রনিল এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। শ্রীলঙ্কায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য এটি একটি ভয়ংকর সময়। তাঁর জন্য সবচেয়ে কঠিন সময় আসছে।’

বর্তমান পার্লামেন্টে ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) একমাত্র প্রতিনিধি রনিল বিক্রমাসিংহে। যদিও তাঁর দল রাজনীতি একসময় বেশ শক্তিশালী ছিল। কিন্তু গত নির্বাচনে দলটির ভরাডুবি হয়।

সাবেক আইনজীবী রনিল বিক্রমাসিংহে একসময় সাংবাদিকও হতে চেয়ছিলেন। এএফপিকে তিনি বলেছিলেন, ১৯৭৩ সালে সংবাদপত্রের পারিবারিক ব্যবসাকে জাতীয়করণ করা না হলে সম্ভবত তিনি সাংবাদিকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিতেন।
রনিল বিক্রমাসিংহে গত দুটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াই করে হেরে গেছেন। দলেক টানা পরাজয় উপহার দেওয়ায় খোদ সমর্থকেরাও তাঁকে ‘রেকর্ড লুজার’ বলে আখ্যা দেন।

পাঁচ হাজার কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণের দায়ে ঋণখেলাপি একটি দেশের দায়িত্ব নিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে। দেশটির অবস্থা এতটাই খারাপ যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির মতো অর্থও নেই। যদিও অর্থনীতি সংস্কারে তাঁর সুনাম আছে। তবে এবার তিনি নিজেই সতর্ক করে বলেছেন যে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট দ্রুত সমাধান হবে না।গত সপ্তাহে তিনি পার্লামেন্টে বলেন, ‘সবচেয়ে খারাপ অবস্থা আসতে এখনো বাকি।’

মাহিন্দা রাজাপাকসে ও তার মিত্রদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
শ্রীলঙ্কায় সদ্য পদত্যাগকারী প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ও তার মিত্রদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ মে) মাহিন্দা, তার রাজনীতিবিদ পুত্র নামাল ও আরও ১৫ মিত্রকে দেশত্যাগ করতে নিষেধ করেছেন স্থানীয় একটি আদালত। সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংসতার অভিযোগে তাদের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া গত সোমবার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলার তদন্ত করতে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন কলম্বোর ম্যাজিস্ট্রেট। সেদিনের ওই ঘটনার জেরে দেশটিতে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, যাতে প্রাণ হারান অন্তত নয়জন, ক্ষয়ক্ষতিও হয় প্রচুর।

লঙ্কান আদালতের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপি’কে জানিয়েছেন, আদালতে একটি আবেদনে রাজাপাকসে ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ, যেভাবেই হোক, যেকোনো সন্দেহভাজনকে আটক করার ক্ষমতা পুলিশের রয়েছে।

গত সোমবারের সহিংসতায় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, রাজাপাকসে ও তার সহযোগীরা প্রায় তিন হাজার সমর্থককে বাসে করে কলম্বোয় নিয়ে গিয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করতে প্ররোচিত করেছিলেন। তাদের দাবি, সরকার সমর্থকরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে বেরিয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়।

এ ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২২৫ জনের মধ্যে বেশ কয়েকজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এবং ক্যাথলিক পুরোহিতও ছিলেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভের আগুনে ঘি ঢালার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। একরাতের মধ্যেই অগ্নিসংযোগ করা হয় শ্রীলঙ্কার মন্ত্রী-এমপিসহ প্রায় অর্ধশত রাজনৈতিক নেতার বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। সহিংসতায় প্রাণ হারান এক এমপি, আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় আরও একজনকে। হামলার শিকার হন সরকারি কর্মকর্তারাও।

পরে তোপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন লঙ্কান প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ তখনো যায়নি। তারা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও করেন। শেষপর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর সাহায্য নিয়ে হেলিকপ্টারে চড়ে সরকারি বাসভবন ছাড়েন তিনি।

৭৬ বছর বয়সী এ নেতা বর্তমানে শ্রীলঙ্কার পূর্বাঞ্চলীয় একটি নৌঘাঁটিতে লুকিয়ে রয়েছেন। তার ছেলে নামাল গত মঙ্গলবার জানিয়েছেন, মাহিন্দা রাজাপাকসের দেশত্যাগ করার কোনো পরিকল্পনা নেই।

সূত্র: এনডিটিভি

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ