প্রকাশিত: ৯:৩২ পূর্বাহ্ণ, মে ১৫, ২০২২
ইউএস বাংলা বার্তা ডেস্কঃ
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে বলপূর্বক ‘গুম’ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। ‘গুম’ হয়ে যাওয়া লোকদের পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে তাদের স্বজনদের ফেরত চেয়ে দাবি জানানো হলেওঅধিকাংশ সময়ে কোন ফল পাওয়া যায় না। এর বিপরীতে ‘গুম’ হয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বজনদের দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। স্বজনের খোঁজে থাকা পরিবারগুলো তাদের প্রিয়জনকে ফেরত চেয়ে সংশ্লিষ্টদের সহায়তা চাইছেন।
‘গুম’ হওয়া পরিবারের কথা
মো. মহাসিন থাকতেন ঢাকার শেওড়াপাড়া এলাকায়।এবছরের ১৯ এপ্রিল রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দেওয়া লোকজন তাকে তুলে নিয়ে যান।মহাসিন পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মহাসিনের বাবা কয়ছর আহাম্মদ গাজী বলেন, “আমার মহাসিন কই? মহাসিন কী অপরাধ করছে?” প্রিয় সন্তান হারিয়ে আর বেশিকিছু বলতে পারলেন কয়ছর আহাম্মদ। মহাসিনের স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, “কেউ তার (স্বামীর) বিষয়ে কোনো তথ্য দিচ্ছে না।”
২০১৩ সালে বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে চোখে কালো কাপড় বেঁধে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। বাবাকে ফেরত চেয়ে তার মেয়ে রাইসা বলেন, “ঈদের নামাজ পড়ে এসে বাবা কি আমাদের সঙ্গে খাবে না?”
গুলশান থানা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি সাইফুর রহমান সজীব।তাকে ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ‘গুম’ করা হয়। তার বাবা শফিক বলেন, “আমার ছেলে চোর, ডাকাত, না সন্ত্রাসী? আমার ছেলে বিএনপি করে, এটাই কি তার অপরাধ?”
যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টে বাংলাদেশ ও ‘গুম’
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ২০২১ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিস প্রকাশ করেছে।২০২১ সালের বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির মূল্যায়নে তৈরি হয়েছে ‘২০২১: কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’।
বিশ্বের ১৯০টি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এ রিপোর্ট প্রকাশ করে। ২০২১ সালে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশটি।
যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১৮ জন লোক বলপূর্বক গুমের শিকার হয়েছে।বাংলাদেশ সরকার এই ধরনের কাজ প্রতিরোধ, তদন্ত বা শাস্তি দেওয়ার জন্য সীমিত প্রচেষ্টা করেছে।জোরপূর্বক গুমের শিকার বেশিরভাগই বিরোধী নেতা, কর্মী এবং ভিন্নমতাবলম্বী।
বেশকিছু ঘটনায় দেখা গেছে, কথিত নিখোঁজ হওয়ার পরে, নিরাপত্তা বাহিনী অভিযোগ ছাড়াই কিছু ব্যক্তিকে ছেড়েদেয়, অন্যদের গ্রেপ্তার করে, কাউকে মৃত পাওয়া যায় এবং অন্যদের খুঁজে পায়নি। প্যারিস-ভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেও জোরপূর্বক অন্তর্ধান অব্যাহত রয়েছে।বিরোধী সদস্যদের, রাজনৈতিক কর্মী এবং ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে যারা সরকারের নীতি এবং মহামারীর প্রতিক্রিয়ারসমালোচনা করেছিলেন তারাই এর মুখোমুখি হয়েছেন।আবার পুলিশ বাহিনী বলপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের অভিযোগ থানায় নথিভুক্ত করেনি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গত বছরের ১৯ জুলাই ‘মায়ের ডাক’ জানিয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে দেশে ৫০০ জনেরও বেশি ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছে।
আবার বলপূর্বক গুমের শিকার কয়েকজন যারা ফিরে এসেছেন তারা ভয়ে তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রকাশ্যে কোনোআলোচনা করেননি।
একই বছরের আগস্টে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দেশে জোরপূর্বক গুমের বিষয়ে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, তারা গত দশকে বলপূর্বক অন্তর্ধানের ৮৬টি ঘটনা নথিভুক্ত করেছে।গত বছর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে আটকের ঘটনাটিও বাংলাদেশেও আলোচিত ছিল।
জাতিসংঘ বাংলাদেশে গুমের অভিযোগ এবং দায়মুক্তির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।২০১৩ সাল থেকে সরকার WGEID -এর বাংলাদেশ পরিদর্শনের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।তাই বাংলাদেশে গুমের অভিযোগ ওঠা বিষয়ে তদন্তের কোনো সুরাহা হয়নি।
প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে বাংলাদেশে গুমের বিষয় নিয়ে মতামত ও প্রতিক্রিয়া জানতে ভয়েস অফ আমেরিকার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল, বিরোধী দল, মানবাধিকারকর্মী ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে।
মাহবুব উল আলম হানিফ
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ
‘গুম’ হওয়া নিয়ে নানারকম তথ্য আমরা জানতে পারছি।অনেক সময়ে দেখা যায় কেউ কেউ নিজেই আত্মগোপণে থেকে যায়। এমন প্রমাণ দেখা গেছে।আবার ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক বিরোধ থেকেও হয়।আবার কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও করে।তাই ‘গুম’ বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে দেখার সুযোগ নাই। আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটা নিয়ে কাজ করছে।পুলিশবাহিনী বেশ দক্ষতার সাথে কাজ করছে।‘গুম’ হয়ে যাওয়া বলে যাদের পরিবার দাবি করছে, তাদের যথাযথ আইনী সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলেই আমি জানি।
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা
বিএনপিদলীয় হুইপ ও সংসদ সদস্য
হত্যার চেয়েও ভয়াবহ কোনো অপরাধ যদি থাকে, সেটা হল গুম।দিন মাস বছর পেরিয়ে যায়, অপেক্ষারত স্বজনরা জানতে পারে না আদৌ গুম হওয়া মানুষটি ফিরবে কিনা।প্রায় সব গুমের সাথে সরাসরি জড়িত দেশের রাষ্ট্রীয় বাহিনী যারস্বীকৃতি সম্প্রতি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে।ব্যক্তির অপরাধ বিচার করার কথা রাষ্ট্রের।কিন্তু সেই রাষ্ট্র যখন নিজেই অপরাধে সরাসরি জড়িয়ে যায়, তখন তার বিচার করবে কে?
নূর খান লিটন
মানবাধিকারকর্মী
রাষ্ট্র যখন তার কৌশল হিসেবে গুমকে ব্যবহার করে, তখন এটি বন্ধ করা যায় না, যতক্ষণ না রাষ্ট্র তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে।আমরা এখন দেখছি গুম হয়ে যাওয়া লোকদের পরিবারের সদস্যদেরকেও নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।এভাবে গুম হয়ে যাওয়ার ফলে একটি আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। জনসাধারণ ভীতি ও আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করে।রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার এই কৌশল পরিবর্তন করতে হবে।
মাহমুদুর রহমান মান্না
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি
সরকারের কাছে অনুনয় করে কান্নাকাটি করে স্বজনদের ফিরে পাওয়া যাবে না।গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের রাস্তায় নেমে আসতে হবে।এইভাবে দীর্ঘদিন চলতে পারে না।বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে একটি ভীতি ও আতঙ্কের জনপদে পরিণত করেছে।গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বললে জানা যায়, দেশটি কতোটা অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।কোনো শাসকদল যখন নিজেদের স্বার্থ কায়েমের জন্য এইভাবে ভিন্নমত ও ভিন্ন দলের লোকদের গুম করে তখন গণতন্ত্র বলে আর কিছু থাকে না।
অধ্যাপক সি আর আবরার
বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেন্টস (বিসিএসএম)
আজকাল গুমের কথা স্বীকার না করে উল্টো ব্যঙ্গ করা হচ্ছে।জনগণের প্রতি ন্যূনতম সম্মান থাকলে এভাবে কথা বলা যায় না।গুমের বিষয়ে সরকার যদি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছে জবাবদিহি করতে পারে, তাহলে দেশের জনগণের কাছে জবাবদিহি করছে না কেন? কোনো সভ্য ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ‘গুম’ চলতেপারে না।‘গুম’ হওয়া পরিবারের সদস্যরা অবর্ণনীয় কষ্ট এবং ভোগান্তির মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে।‘গুম’ হচ্ছে না বলে যারা বলার চেষ্টা করছেন, তাদের উদ্দেশ্য অসৎ বলে মনে করি।
সুত্রঃ ভয়েস অব আমেরিকা
নির্বাহী সম্পাদক ও প্রকাশক – তৌফিকুল আম্বিয়া টিপু
বার্তা সম্পাদক- হুমায়ূন কবীর ফরীদি
উপদেষ্টা: হারুন মিয়া
বাংলাদেশ কার্যালয়- কলকলিয়া বাজার, জগন্নাথপুর, সুনামগন্জ।
প্রধান কার্যালয়- ৮২৪ মেইন স্রীট, মেনচেষ্টার, কানেকটিকাট- ০৬০৪০, যুক্তরাষ্ট্র।
ফোনঃ ০১৭১৭৯৩১৬৫৮(বিডি) +১৮৬০৭৯৬৭৮৮৮(ইউএসএ)
ইমেইলঃ usbanglabarta@gmail.com
Design and developed by Web Nest