প্রকাশিত: ২:৪২ পূর্বাহ্ণ, মে ২৭, ২০২২
লন্ডন প্রতিনিধিঃ
যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটিশ মালিকানাধীন অনলাইন ও অ্যাপনির্ভর মানি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে একে একে বন্ধ হচ্ছে বাংলাদেশি ব্যাংকের মালিকানাধীন এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান। এই তালিকায় এবার যুক্ত হচ্ছে প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পিবিএল এক্সচেঞ্জ (ইউকে) লিমিটেড। ১ জুলাই থেকে ব্রিটেনে নিজেদের কার্যক্রম গুছিয়ে নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি ব্যাংকের মালিকানাধীন সাতটি মানি এক্সচেঞ্জ বন্ধ হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে ১০ লাখ বাংলাদেশি বহুল ব্রিটেন থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের কমিশন চলে যাচ্ছে বিদেশিদের হাতে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন সংকট থাকলেও বছর তিনেক আগেও ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে মানি ট্রান্সফার ব্যবসা জমজমাট ছিল। বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশি কমিউনিটির কয়েকশ’ মানুষ ও পরিবারের জীবিকার সংস্থান ছিল এই ব্যবসা। কিন্তু বিদেশি অ্যাপগুলোর দাপটে বাংলাদেশিদের সেই ব্যবসা এখন নেমে এসেছে অর্ধেকের নিচে। খোদ বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর সরাসরি মালিকানায় পরিচালিত এক্সচেঞ্জগুলোই ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থাও খারাপ।
২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ব্রিটেনে একে একে বন্ধ হয়ে যায় এবি, পূবালী, এনসিসি, সাউথ ইস্ট, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পরিচালিত মানি এক্সচেঞ্জ শাখা। এরমধ্যে ২০১২ সালে এনসিসি, ২০১৫ সালে পূবালী, ২০১৮ সালে সাউথ ইস্ট, ২০২০ সালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এক্সচেঞ্জ বন্ধ হয়েছে। বিপরীত দিকে, বিদেশি রেমিট্যান্স কোম্পানি বাংলাদেশি কমিউনিটির পরিচিত ব্যক্তিদের অ্যাকাউন্ট পিছু ৩০ পাউন্ড পর্যন্ত কমিশন ও বোনাসসহ কমিশন এজেন্ট হওয়ার সুযোগ দিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে বাংলাদেশি কমিউনিটির ঘরে ঘরে।
প্রাইম ব্যাংকের মালিকানায় পরিচালিত পিবিএল এক্সচেঞ্জ ইউকের ট্রান্সজেকশন মনিটরিং অফিসার মাহবুবুর রহমান শিবলু বৃহস্পতিবার (২৬ মে) বিকালে বলেন, ৩০ মে’র পর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রাইম ব্যাংকের লন্ডনের পিবিএল এক্সচেঞ্জ।
তিনি জানান, বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর ব্রিটেনের এক্সচেঞ্জ বন্ধের মূল কারণ ব্যবসা না থাকা। আমেরিকান, ব্রিটিশ বা অন্য দেশের নামে বিদেশিদের মালিকানাধীন অ্যাপগুলোর দাপটে বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো এ দেশে তাদের শাখা বা এক্সচেঞ্জ বন্ধ করছে। অ্যাপগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিরা টাকা পাঠাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু রেমিট্যান্স এক্সচেঞ্জের হাজার কোটি টাকার বিশাল মুনাফা চলে যাচ্ছে বিদেশিদের হাতে। এতে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৫ সাল থেকে ব্রিটেনের বার্কলেস, নেটওয়েস্টসহ হাইস্ট্রিটের মূলধারার ব্যাংকগুলো বিদেশি এক্সচেঞ্জগুলোর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিলে সংকট শুরু হয়। এরপর বাংলাদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো অনলাইনভিত্তিক ক্লিয়ার ব্যাংকের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট করে ব্যবসা চালু রাখার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় কমিশনের হার অনেক বেশি হওয়ায় মুনাফা হারাতে থাকে বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো। অনেক ব্যাংক তৃতীয় পক্ষ স্মল ওয়ার্ল্ডের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগী এসব প্রতিষ্ঠানকে উচ্চ কমিশন দিতে গিয়ে প্রতিযোগিতার বাজারে লোকসান দিতে হয়। এছাড়া স্থানীয় বাংলাদেশিদের ব্যাংকের ট্রান্সফারের চেয়ে নগদ টাকা তুলে পাঠানোর প্রবণতা ব্রিটিশ সরকারের ক্যাশলেস নীতিমালার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারার ব্যর্থতার কথাও জানান মাহবুবুর রহমান শিবলু।
করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে বাংলাদেশি কমিউনিটির বৃহৎ অংশ বিদেশি কোম্পানির অ্যাপভিত্তিক সেবার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন বলে মত দেন আইএফআইসি ব্যাংকের মালিকানাধীন আইএফআইসি এক্সচেঞ্জের সিইও মো. মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বর্তমানে তাদের ৩০ শতাংশ রেমিট্যান্স যায় নিজেদের অ্যাপের মাধ্যমে।
আইএফআইসি এক্সচেঞ্জ লন্ডনের একটি শাখার মাধ্যমে মাসে ৩০ কোটি ও বছরে ৩৬০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে। তিনি বলেন, রেগুলেটরি ইস্যু, ব্রিটেনের মূলধারার রেমিট্যান্স সিস্টেমের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারা, বাংলাদেশি এক্সচেঞ্জগুলোর অনলাইন ও অ্যাপ সুবিধার স্বল্পতা বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্স পাঠাবার কমিশন বিদেশিদের হাতে চলে যাওয়ার অন্যতম কারণ। ব্রিটেনে এখন যে পাচঁটি বাংলাদেশি এক্সচেঞ্জ টিকে আছে সেগুলোর মধ্যে শুধু আইএফআইসি এক্সচেঞ্জের ব্রিটেনে অথরাইজড পেমেন্ট অথরিটির লাইসেন্স আছে। ব্রিটেনের এইচএমআরসিসহ সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো মানি ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে নগদ টাকাকে নিরুৎসাহিত করছে। সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাল না মিলাতে পারলে বাংলাদেশি বাকি এক্সচেঞ্জগুলোও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
আইএফআইসি এক্সচেঞ্জের কমপ্লায়েন্স অ্যান্ড রিলেশনশিপ ম্যানেজার মো. জাওয়াদুর রব চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে সমন্বিত উদ্যোগ নিলে মানুষ একদিকে হুন্ডির চক্র থেকে বেরিয়ে আসবে, অন্যদিকে সরকারও লাভবান হবে।
এক্সিম ব্যাংকের মালিকানাধীন এক্সিম এক্সচেঞ্জের সিইও জসিম উদ্দীন বৃহস্পতিবার (২৬ মে) বলেন, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, স্মল ওয়ার্ল্ড বা মানিগ্রামের মতো বড় কোম্পানিগুলো এখন রেমিট্যান্স মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে প্রতি ১০০ পাউন্ডে এখন ৪০ পয়সাও লাভ ধরে রাখা যাচ্ছে না। এমন বাস্তবতায় সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও হাইকমিশনের মাধ্যমে কার্যকর কোনও পদক্ষেপ না নিলে ব্রিটেনের রেমিট্যান্স মার্কেটে বাংলাদেশি সব এক্সচেঞ্জ বন্ধ হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
উল্লেখ্য, গত ৬ বছর ধরে সোনালী ব্যাংক ইউকে লিমিটেডের ব্যাংকিং কোনও কার্যক্রম না থাকলেও ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটি আগামী ১৬ আগস্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
নির্বাহী সম্পাদক ও প্রকাশক – তৌফিকুল আম্বিয়া টিপু
বার্তা সম্পাদক- হুমায়ূন কবীর ফরীদি
উপদেষ্টা: হারুন মিয়া
বাংলাদেশ কার্যালয়- কলকলিয়া বাজার, জগন্নাথপুর, সুনামগন্জ।
প্রধান কার্যালয়- ৮২৪ মেইন স্রীট, মেনচেষ্টার, কানেকটিকাট- ০৬০৪০, যুক্তরাষ্ট্র।
ফোনঃ ০১৭১৭৯৩১৬৫৮(বিডি) +১৮৬০৭৯৬৭৮৮৮(ইউএসএ)
ইমেইলঃ usbanglabarta@gmail.com
Design and developed by Web Nest