নবীজি (স.)’র কি অক্ষর জ্ঞান ছিলনা(?)

প্রকাশিত: ১২:৫১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২

নবীজি (স.)’র কি অক্ষর জ্ঞান ছিলনা(?)

নবীজি (স.)’র কি অক্ষর জ্ঞান ছিলনা (?)

 

 

প্রিয় নবী(স.)

“দয়ালনবীর কোন অক্ষরজ্ঞান ছিল না। আলিফ, বা, তা, সা, কোনটারে “জিম” বলে কোনটারে হা বলে উনি বুঝতেন না। ১, ২, ৩ কিভাবে লেখে, লেখা থাকলেও পড়তে জানতেন না। দয়ালনবী নিরক্ষর ছিলেন”।

নবীজীকে নিরক্ষর বলা যাবে কি

আল কুরআনে বর্ণিত “উম্মী” শব্দের প্রকৃত অর্থ কী?

অনেকে নিজের অজ্ঞতার কারণে রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিরক্ষর বলে সম্বোধন করে।

নাউযুবিল্লাহ!!

এখন কথা হচ্ছে আল কুরআনে “নাবিয়্যুল উম্মী” মানে আমাদের প্রাণপ্রিয় নবীজীকে কি নিরক্ষর বলা হয়েছে? অথচ আমাদের প্রাণপ্রিয় নবীজী তিনি লিখতেন ও লেখার ব্যাপারে তা’লীম দিতেন।

 

হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ তায়ালা সকল সৃষ্টি থেকে বেশী ইলম দান করেছেন। সুন্দর হস্তাক্ষরে লিখন উনার মু’জিযা। তিনি মুয়াল্লিম হিসেবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে আক্ষরিক জ্ঞান শিক্ষা দিতেন।

যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 

الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ

 

অর্থঃ- “যিনি (আল্লাহ) কলম দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন।” (সূরা আলাক্ব, আয়াত-৪)

অর্থাৎ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বয়ং আল্লাহ পাক লেখার যাবতীয় ইলম্ দিয়েই সৃষ্টি করেছেন।

আল্লাহ পাক অন্যত্র ইরশাদ করেন,

 

خَلَقَ الْإِنْسَانَ-عَلَّمَهُ الْبَيَانَ

অর্থঃ- তিনি (আল্লাহ) ইনসানকে সৃষ্টি করেছেন এবং বয়ান শিক্ষা দিয়েছেন।” (সূরা আর রহমান, আয়াত-২,৩)

এখানে بيان এর তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে,

ماكان وما يكون.

অর্থ- যা সৃষ্টি হয়েছে এবং হবে। অর্থাৎ পূর্ব ও পরবর্তী সব ঘটনার জ্ঞান। (তাফসীরে মাআলিমুত তানযীল ২য় ৩১২পৃঃ)

অর্থাৎ আয়াতের অর্থ হচ্ছে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ্ পাক সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে সমস্ত কিছুর জ্ঞান দান করেছেন।

যেমন হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

اتيت علم الْأَوَّلِينَ وَالْآخِرِينَ

অর্থঃ- আমাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত জ্ঞান দান করা হয়েছে।

 

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

خْبَرَنِى سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم – يَقُولُ «بُعِثْتُ بِجَوَامِعِ الْكَلِمِ، وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ، وَبَيْنَا أَنَا نَائِمٌ أُتِيتُ بِمَفَاتِيحِ خَزَائِنِ الأَرْضِ، فَوُضِعَتْ فِى يَدِى». قَالَ مُحَمَّدٌ وَبَلَغَنِى أَنَّ جَوَامِعَ الْكَلِمِ أَنَّ اللَّهَ يَجْمَعُ الأُمُورَ الْكَثِيرَةَ الَّتِى كَانَتْ تُكْتَبُ فِى الْكُتُبِ قَبْلَهُ فِى الأَمْرِ الْوَاحِدِ وَالأَمْرَيْنِ. أَوْ نَحْوَ ذَلِكَ. أطرافه ٢٩٧٧، ٦٩٩٨، ٧٢٧٣ – تحفة ١٣٢١٦.

অর্থঃ- ‘আমাকে (শুরু হতে শেষ পর্যন্ত) সমস্ত ইলিম প্রদান করা হয়েছে।” (বুখারী ও মুসলিম)

 

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ইলমের অধিকারী। আর লিখাও হচ্ছে ইলমের একটা অংশ। লিখা যে ইলমের অংশ তা সূরা আলাক্ব-এর ৪নং আয়াতের

عَلَّمَ بِالْقَلَمِ

‘তিনি (আল্লাহ) কলম দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন’, এ আয়াত শরীফ দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়। কারণ علم (আল্লামা) শব্দটির مصدر (মাছদার) বা ক্রিয়ামূল হচ্ছে تعليم (তা’লীম) বা শিক্ষা দেয়া। অতএব, স্বয়ং আল্লাহ পাক যাকে লিখার উপকরণ তথা কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন তিনি লিখতে জানতেন না বা লিখতে পারতেন না এ ধারণা পোষণ করা মিথ্যা ও অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছু নয়।

মূলতঃ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবশ্যই লিখতে জানতেন। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ উল্লেখ করা হয়েছে,

عن معاوية انه كان يكتب بين يديه عليه السلام فقال له الق الدواة وحرف القلم واقم الباء وفرق السين وتعور الميم مع انه عليه السلام لم يكتب ولم يقرأ من كباب الاولين.

অর্থঃ- হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে (ওহী) লিখতেন, অতঃপর হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে অক্ষর লিখার পদ্ধতি শিক্ষা দিয়ে ইরশাদ করেন, দোয়াত এভাবে রাখ, কলম এভাবে ঘুরাও, “با” (বা) কে এভাবে সোজা করে লিখ, سين (সীন) কে পৃথক কর, আর মীম ميم (মীম) কে বাঁকা করোনা, অথচ তিনি দুনিয়াবী কোন কাতিবের (লিখকের)-এর নিকট থেকে লেখা শিখেননি, আর কোন প্রাচীনকালীন কিতাব থেকেও তা পড়েননি। (ফতহুল বারী লি শরহে বুখারী ৭/৫০৪, আস শিফা বিতারীফি হুকমিল মুস্তফা ১/৩৫৮, কিতাবু জামিউল কুরআন ১/১৪১, তাফসীরে কুরতুবী ১৩/৩৫৩)

উল্লেখ্য, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর লেখার প্রয়োজন হতো না। কারণ মানুষ লিখে থাকে এজন্য যে, লিখে না রাখলে ভুলে যাবে। কিন্তু রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর লেখার প্রয়োজন নেই। কারণ তিনি কিছুই ভুলতেন না। তিনি সব কিছুই লওহে মাহফুজ থেকে দেখে নিতেন। তাঁর মুয়াল্লিম স্বয়ং আল্লাহ পাক। সুতরাং তাঁর লেখা-পড়ার কোন প্রয়োজন ছিল না। আর তিনি যদি লেখা-পড়া করতেন তাহলে বাতিলপন্থীরা সন্দেহ করতো। যেমন, পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবে হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আবির্ভাবের পরিচয় দেয়া ছিল কয়েকটি। যেমন, তিনি হবেন ‘উম্মী’ (অর্থাৎ নবীগণের মূল হবেন) এবং সুন্দর হস্তাক্ষরে লিখবেন কিন্তু পার্থিব ওস্তাদের কাছে লেখা-পড়া করবেন না। কোন বই-পুস্তক পড়বেন না।

যেমন, এ সম্পর্কে কুরআন শরীফে ইরশাদ হচ্ছে,

 

وَمَا كُنْتَ تَتْلُو مِنْ قَبْلِهِ مِنْ كِتَابٍ وَلَا تَخُطُّهُ بِيَمِينِكَ ۖ إِذًا لَارْتَابَ الْمُبْطِلُونَ

(সূরাঃ আল আনকাবুত, আয়াতঃ ৪৮)

 

অর্থঃ- “এর পূর্বে (নুবুওওয়াত প্রকাশের পূর্বে) হে হাবীব (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি না কোন কিতাব পড়তেন এবং না নিজ হাতে কোন কিছু লিখতেন, যদি তা করতেন, তবে বাতিলপন্থীরা নিশ্চয়ই সন্দেহ করতো (যে এটা আল্লাহ পাক-এর বাণী নয়, আপনার রচিত কোন কিতাব)।” (সূরা আনকাবুত, আয়াত-৪৮)

 

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুফাসসির হযরত ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

كان عليه السلام يعلم الخطوط ويخبر عنها

অর্থ: হুযুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লিখতে জানতেন এবং অপরকেও জানাতেন। (তাফসীরে রুহুল মায়ানী ৬/৬১০)

 

আর তিনি যে লিখতে জানতেন এ প্রসঙ্গে “ছহীহ বুখারী শরীফ”-এর ‘কিতাবুল ইলম্’-এর ‘বাবু কিতাবাতিল ইলম’ অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে,

 

٥٩٦٦ – وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ – رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا – قَالَ: «لَمَّا حُضِرَ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – وَفِي الْبَيْتِ رِجَالٌ، فِيهِمْ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ، قَالَ النَّبِيُّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -: (هَلُمُّوا أَكْتُبْ لَكُمْ كِتَابًا لَنْ تَضِلُّوا بَعْدَهُ) . فَقَالَ عُمَرُ: قَدْ غَلَبَ عَلَيْهِ الْوَجَعُ، وَعِنْدَكُمُ الْقُرْآنُ، حَسْبُكُمْ كِتَابُ اللَّهِ، فَاخْتَلَفَ أَهْلُ الْبَيْتِ وَاخْتَصَمُوا، فَمِنْهُمْ مَنْ يَقُولُ: قَرِّبُوا يَكْتُبْ لَكُمْ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وَمِنْهُمْ مَنْ يَقُولُ مَا قَالَ عُمَرُ: فَلَمَّا أَكْثَرُوا اللَّغَطَ وَالِاخْتِلَافَ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -: (قُومُوا عَنِّي» ) قَالَ عُبَيْدُ اللَّهِ: فَكَانَ ابْنُ عَبَّاسٍ يَقُولُ: إِنَّ الرَّزِيئَةَ كُلَّ الرَّزِيَّةِ مَا حَالَ بَيْنَ رَسُولِ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – وَبَيْنَ أَنْ يَكْتُبَ لَهُمْ ذَلِكَ الْكِتَابَ لِاخْتِلَافِهِمْ وَلَغَطِهِمْ.

وَفِي رِوَايَةِ سُلَيْمَانَ بْنِ أَبِي مُسْلِمٍ الْأَحْوَلِ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: يَوْمُ الْخَمِيسِ، وَمَا يَوْمُ الْخَمِيسِ؟ ثُمَّ بَكَى حَتَّى بَلَّ دَمْعُهُ الْحَصَى. قُلْتُ يَا ابْنَ عَبَّاسٍ! وَمَا يَوْمُ الْخَمِيسِ؟ قَالَ: اشْتَدَّ بِرَسُولِ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – وَجَعُهُ فَقَالَ: ( «ائْتُونِي بِكَتِفٍ أَكْتُبْ لَكُمْ كِتَابًا لَا تَضِلُّوا بَعْدَهُ أَبَدًا» ) . فَتَنَازَعُوا وَلَا يَنْبَغِي عِنْدَ نَبِيٍّ تَنَازُعٌ. فَقَالُوا: مَا شَأْنُهُ؟ ! أَهَجَرَ؟ اسْتَفْهِمُوهُ، فَذَهَبُوا يَرُدُّونَ عَلَيْهِ. فَقَالَ: ( «دَعُونِي، ذَرُونِي، فَالَّذِي أَنَا فِيهِ خَيْرٌ مِمَّا تَدْعُونَنِي إِلَيْهِ» ) . فَأَمَرَهُمْ بِثَلَاثٍ: فَقَالَ: ( «أَخْرِجُوا الْمُشْرِكِينَ مِنْ جَزِيرَةِ الْعَرَبِ، وَأَجِيزُوا الْوَفْدَ بِنَحْوِ مَا كُنْتُ أُجِيزُهُمْ» ) . وَسَكَتَ عَنِ الثَّالِثَةِ، أَوْ قَالَهَا فَنَسِيتُهَا، قَالَ سُفْيَانُ: هَذَا مِنْ قَوْلِ سُلَيْمَانَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ.

অর্থাৎ -“হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অসুস্থতা বৃদ্ধি পেল। তখন তিনি উপস্থিত ছাহাবীদের বললেন, তোমরা এক টুকরা কাগজ নিয়ে এস। আমি তোমাদের জন্য কতিপয় উপদেশ লেখে দেব, যাতে তোমরা পরবর্তী কালে পথভ্রষ্ট না হও। (বুখারী শরীফ: হাদীস নং ৪৪৩২, মুসলিম শরীফ: হাদীস নং ১৬৩৭, মিশকাত শরীফ ৫৯৬৬)

উক্ত হাদীছ শরীফ থেকে প্রমাণ হলো হুযুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লেখতে জানতেন। আর সে কারনেই তিনি খাতা কলম নিয়ে আসার জন্য বললেন, যাতে তিনি উপদেশ লেখে দিতে পারেন। তিনি কিন্তু এটা বলেন নাই, কাগজ কলম এনে তোমরা লেখ আমি বলি। বরং তিনি বলেছেন , তোমরা এক টুকরা কাগজ নিয়ে এস। আমি তোমাদের জন্য কতিপয় উপদেশ লেখে দেব। যার প্রমাণ বুখারী মুসলিম শরীফেই বিদ্যমান।

 

হাদীস শরীফে আরো এসেছে, হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

– باب كَيْفَ يُكْتَبُ: هَذَا مَا صَالَحَ فُلاَنُ بْنُ فُلاَنٍ، وَفُلاَنُ بْنُ فُلاَنٍ، وَإِنْ لَمْ يَنْسُبْهُ إِلَى قَبِيلَتِهِ أَوْ نَسَبِهِ

٢٦٩٨ – حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ أَبِى إِسْحَاقَ قَالَ سَمِعْتُ الْبَرَاءَ بْنَ عَازِبٍ – رضى الله عنهما – قَالَ لَمَّا صَالَحَ رَسُولُ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم – أَهْلَ الْحُدَيْبِيَةِ كَتَبَ عَلِىٌّ بَيْنَهُمْ كِتَابًا فَكَتَبَ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم -. فَقَالَ الْمُشْرِكُونَ لاَ تَكْتُبْ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ، لَوْ كُنْتَ رَسُولًا لَمْ نُقَاتِلْكَ. فَقَالَ لِعَلِىٍّ «امْحُهُ». فَقَالَ عَلِىٌّ مَا أَنَا بِالَّذِى أَمْحَاهُ. فَمَحَاهُ رَسُولُ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم – بِيَدِهِ، وَصَالَحَهُمْ عَلَى أَنْ يَدْخُلَ هُوَ وَأَصْحَابُهُ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ، وَلاَ يَدْخُلُوهَا إِلاَّ بِجُلُبَّانِ السِّلاَحِ، فَسَأَلُوهُ مَا جُلُبَّانُ السِّلاَحِ فَقَالَ الْقِرَابُ بِمَا فِيهِ. أطرافه ١٧٨١، ١٨٤٤، ٢٦٩٩، ٢٧٠٠، ٣١٨٤، ٤٢٥١ – تحفة ١٨٧١

٢٦٩٩ – حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُوسَى عَنْ إِسْرَائِيلَ عَنْ أَبِى إِسْحَاقَ عَنِ الْبَرَاءِ – رضى الله عنه – قَالَ اعْتَمَرَ النَّبِىُّ – صلى الله عليه وسلم – فِى ذِى الْقَعْدَةِ، فَأَبَى أَهْلُ مَكَّةَ أَنْ يَدَعُوهُ يَدْخُلُ مَكَّةَ، حَتَّى قَاضَاهُمْ عَلَى أَنْ يُقِيمَ بِهَا ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ، فَلَمَّا كَتَبُوا الْكِتَابَ كَتَبُوا هَذَا مَا قَاضَى عَلَيْهِ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم -. فَقَالُوا لاَ نُقِرُّ بِهَا، فَلَوْ نَعْلَمُ أَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ مَا مَنَعْنَاكَ، لَكِنْ أَنْتَ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ. قَالَ «أَنَا رَسُولُ اللَّهِ وَأَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ». ثُمَّ قَالَ لِعَلِىٍّ «امْحُ رَسُولُ اللَّهِ». قَالَ لاَ، وَاللَّهِ لاَ أَمْحُوكَ أَبَدًا، فَأَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم – الْكِتَابَ، فَكَتَبَ هَذَا مَا قَاضَى عَلَيْهِ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، لاَ يَدْخُلُ مَكَّةَ سِلاَحٌ إِلاَّ فِى الْقِرَابِ، وَأَنْ لاَ يَخْرُجَ مِنْ أَهْلِهَا بِأَحَدٍ، إِنْ أَرَادَ أَنْ يَتَّبِعَهُ، وَأَنْ لاَ يَمْنَعَ أَحَدًا مِنْ أَصْحَابِهِ أَرَادَ أَنْ يُقِيمَ بِهَا. فَلَمَّا دَخَلَهَا، وَمَضَى الأَجَلُ أَتَوْا عَلِيًّا، فَقَالُوا قُلْ لِصَاحِبِكَ اخْرُجْ عَنَّا فَقَدْ مَضَى الأَجَلُ. فَخَرَجَ النَّبِىُّ – صلى الله عليه وسلم – فَتَبِعَتْهُمُ ابْنَةُ حَمْزَةَ يَا عَمِّ يَا عَمِّ. فَتَنَاوَلَهَا عَلِىٌّ فَأَخَذَ بِيَدِهَا، وَقَالَ لِفَاطِمَةَ عَلَيْهَا السَّلاَمُ دُونَكِ ابْنَةَ عَمِّكِ، احْمِلِيهَا. فَاخْتَصَمَ فِيهَا عَلِىٌّ وَزَيْدٌ وَجَعْفَرٌ، فَقَالَ عَلِىٌّ أَنَا أَحَقُّ بِهَا وَهْىَ ابْنَةُ عَمِّى. وَقَالَ جَعْفَرٌ ابْنَةُ عَمِّى وَخَالَتُهَا تَحْتِى.

وَقَالَ زَيْدٌ ابْنَةُ أَخِى. فَقَضَى بِهَا النَّبِىُّ – صلى الله عليه وسلم – لِخَالَتِهَا. وَقَالَ «الْخَالَةُ بِمَنْزِلَةِ الأُمِّ». وَقَالَ لِعَلِىٍّ «أَنْتَ مِنِّى وَأَنَا مِنْكَ». وَقَالَ لِجَعْفَرٍ «أَشْبَهْتَ خَلْقِى وَخُلُقِى». وَقَالَ لِزَيْدٍ «أَنْتَ أَخُونَا وَمَوْلاَنَا». أطرافه ١٧٨١، ١٨٤٤، ٢٦٩٨، ٢٧٠٠، ٣١٨٤، ٤٢٥١ – تحفة ١٨٠٣ – ٢٤٢/ ٣

 

অর্থাৎ- নবীয়ে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিলক্বদ মাসে ওমরাহ্ করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু মক্কাবাসী তাঁকে মক্কা শরীফে প্রবেশ করতে দিতে রাজী ছিলনা, যতক্ষণ না তিনি তাদের সাথে এ মর্মে সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ হন যে, তিনি সেখানে (মক্কা শরীফে) তিনদিনের অধিক অবস্থান করবেন না। অতঃপর যখন সন্ধিপত্র লেখার উপর ঐকমত্য হলো, তারা লেখলো ‘এতদ্বারা মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সাথে সন্ধি করলেন।’ অতঃপর মক্কার কাফিররা বললো, আমরা এটা মানিনা, কারণ যদি আমরা আপনাকে আল্লাহর রসূল হিসেবে মেনে নিয়ে থাকি তাহলে আমরা আপনাকে তো কোন রকম বাঁধাও দিতাম না বরং আপনি হলেন, মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ্। সুতরাং এটাই লেখতে হবে।” তখন হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি আল্লাহ পাক-এর রসূল এবং আমিই আব্দুল্লাহর পুত্র, তারপর তিনি হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, “রসুলুল্লাহ” শব্দটা কেটে দাও।” হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আরজ করলেন, না, আল্লাহ পাক-এর কসম! আমার পক্ষে (আল্লাহ্ পাক প্রদত্ত্ব) আপনার (গুণবাচক) নাম কাটা সম্ভব নয়। অতঃপর হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত চুক্তিপত্র খানা হাতে নিলেন। তাঁর নিজ হাতে লিখার ইচ্ছা ছিলনা, তবুও সুন্দরভাবে লিখলেন,

هذا ما قاضى محمدبن عبد الله.

অর্থঃ-“এতদ্বারা চুক্তি করলেন মুহম্মদ ইবনে

আব্দুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।” (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-১৮৬৫৮, সুনানে কুবরা বায়হাকী, হা দীস নং ১৩৬৬৮, দালায়েলুন নবুওওয়াত ৪/৩৩৮, সুনানে দারেমী ২৫০৭, ফতহুল বারী ৭/৫০৩, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৭/৩৫৯, তাফসীরে বাগবী ৭/৩১৭, রুহুল মায়ানী ১১/৬)

 

٦٥ – حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مُقَاتِلٍ أَبُو الْحَسَنِ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ قَالَ أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ كَتَبَ النَّبِىُّ – صلى الله عليه وسلم – كِتَابًا – أَوْ أَرَادَ أَنْ يَكْتُبَ – فَقِيلَ لَهُ إِنَّهُمْ لاَ يَقْرَءُونَ كِتَابًا إِلاَّ مَخْتُومًا. فَاتَّخَذَ خَاتَمًا مِنْ فِضَّةٍ نَقْشُهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ. كَأَنِّى أَنْظُرُ إِلَى بَيَاضِهِ فِى يَدِهِ. فَقُلْتُ لِقَتَادَةَ مَنْ قَالَ نَقْشُهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ قَالَ أَنَسٌ. أطرافه ٢٩٣٨، ٥٨٧٠، ٥٨٧٢، ٥٨٧٤، ٥٨٧٥، ٥٨٧٧، ٧١٦٢ – تحفة ١٢٥٦ – ٢٦/ ١

 

এখন আমরা দেখবো #আল_কুরআনে_আল্লাহ_তায়ালা_নবীজীকে_উম্মী_বলেছেন_তার_মমার্থ_কী_?

 

কুরআন শরীফে এবং হাদীছ শরীফে বর্ণিত النبى الامى. দ্বারা মুহাদ্দিছীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এরূপ ব্যাখ্যা করেছেন যে, রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু দুনিয়াবী কোন শিক্ষক কর্তৃক লিখা-পড়া শিখেননি সেহেতু তিনি “নাবিয়্যুল উম্মী” উপাধীতে ভূষিত। যা তাঁর শ্রেষ্ঠ নবী এবং শ্রেষ্ঠ রসূল হওয়ার প্রমাণ। কিন্তু তার পরেও তিনি যে লিখতেন সেটা ছিল তার মু’জিযা। যেমন, বুখারী শরীফের প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাকারী আল্লামা কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, “এখানে উম্মী মানে এ লিখাটা হচ্ছে তাঁর মু’জিযা।” (বুখারী শরীফ ২য় খণ্ড)

 

#উম্মী শব্দটি আরবি ‘উম্মুন’ ধাতুর সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর উম্মুন শব্দের অর্থ হচ্ছে মা বা কোনো জিনিসের মূল বা আসল। যেমন মক্কা নগরীকে ‘উম্মুল কুরা’ অর্থাৎ দুনিয়ার সব নগরীর উৎসমূল, এভাবে সূরা ফাতিহাকে ‘উম্মুল কিতাব’ বা কোরআনের মূল বলা হয়।

 

আরবি সমৃদ্ধ একটি ভাষা। এ ভাষায় একটি শব্দের অনেক অর্থ হয়ে থাকে। তাই বাক্যের ভাবধারা অনুযায়ী শব্দের অর্থ করতে হয়। অন্যথায় অনুবাদ বা অর্থ বিকৃত হয়ে যায়। #উম্মী শব্দের অর্থ যেমন মূল বা আসল, তেমনি তার অর্থ নিরক্ষর, লেখাপড়াহীন, মূর্খ ইত্যাদিও হয়। কিন্তু সূরা আরাফের ১৫৭, ১৫৮ নং আয়াতে যেখানে নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথা উল্লেখ আছে সে সব আয়াতে নিরক্ষর, লেখাপড়াহীন অর্থ নেয়াটা মূর্খতারই পরিচায়ক। প্রকৃতপক্ষে যারা মূর্খ তারাই নবীজীর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শানে ব্যবহৃত ‘উম্মী’ শব্দটিকে নিরক্ষর, লেখাপড়াহীন অর্থে ব্যবহার করেন। অথচ উল্লিখিত আয়াতদ্বয়ে ‘উম্মী’ শব্দটি নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি বিশেষ বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শানে ব্যবহৃত #উম্মী শব্দটির অর্থ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

 

মুলতঃ النبى الامى এখানে امى অর্থ সাইয়্যিদ, মূল, অভিভাবক, প্রধান, শ্রেষ্ঠ ইত্যাদি। অর্থাৎ যিনি সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের মূল বা যাকে ব্যতীত কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণই সৃষ্টি হতেন না তিনিই النبى الامى (নাবিয়্যূল উম্মী) লক্ববে ভূষিত।

 

উপরোক্ত অর্থ ছাড়াও অভিধানে امى শব্দটি ভিন্ন অর্থেও ব্যবহৃত হয়, কিন্তু তা হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শানে প্রযোজ্য নয়। #স্মরণীয় যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের ক্ষেত্রে কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফের এমন তাফসীর, অনুবাদ, ব্যাখ্যা করা যাবেনা যার কারণে তাঁদের শানের খেলাফ হয়। তাদের শানে সামান্য কিলোকাল করার অর্থই হচ্ছে তাঁদের বিরোধিতা করা; আর তাদের বিরোধিতা করা হচ্ছে স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর বিরোধিতা করা। ফলে তাদের জাহান্নাম ছাড়া আর কোন পথ নেই।

তাই বলব, আল্লাহ পাক যেন আমাদের সকলকে হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে নাবিয়্যূল উম্মী তথা সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ছিলেন, তিনি যে লিখতে জানতেন এ সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সঠিক আক্বীদা রাখার তাওফীক দান করেন। আমীন

লেখক-

মাওঃ মুফতি মোঃ আবু সাঈদ সৈয়দ

সুপারিন্টেন্ডেন্ট

হাতিয়া,নাচনী,বেতাউকা পীর আকিলশাহ নেছারিয়া দাখিলমাদরাসা

দিরাই, সুনামগঞ্জ